ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডিমের সাদা অংশের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনাকে খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কেননা ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডিমের সাদা অংশের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।
তাছাড়া ডিম সম্পর্কে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন ডিমের সাদা অংশে কি থাকে না, ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক, ডিমের কুসুম দিয়ে রূপচর্চা ইত্যাদি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়ে নেই।
পেজ সূচিপএ
ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। কম খরচে প্রোটিনের সবথেকে ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য অনেকে কুসুমের অংশটুকু বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটুকু খেয়ে থাকেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ ব্যক্তির জন্য ডিমের কুসুম খেতে কোন বাধা নেই কারণ ডিমের কুসুম আছে ভিটামিন ও খনিজ। এ ভিটামিন ও খনিজ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিমের কিছু উপকারিতা।
যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ডিমের কুসুম একটি উপকারি খাবার হতে পারে। ডিমের কুসুমে রয়েছে ফসিভিটন নামক পোটিন। যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। চিকিৎসকের নিষেধ না থাকলে নিয়মিত ডিম খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সব ধরনের অসুখ থেকে দূরে থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত থাকা দরকার। এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ডিমের কুসুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিমের কুসুমে রয়েছে সালফেটেড গ্লাইকোপেপটাইডস।
এই উপাদানটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ডিমের কুসুম সহায়তা করে। ডিমের কুসুম হাইপার টেনশনে আক্রান্ত রোগীর জন্য বেশ কার্যকর। ডিমের কুসুমে থাকা পেপটাইডস নামক উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমের কুসুম কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে থাকে। ডিমের কুসুম চোখের সমস্যা দূর করে। ডিমের কুসুমে রয়েছে চোখের জন্য উপকারী লিউটিন ও জিয়াজ্যানথিন। এছাড়া ডিমের কুসুমে থাকে ক্যারোটিনয়েডস।
এই ক্যারোটিন চোখের ছানি ও মাসকুলার ডিজেনারেশন দূর করতে সাহায্য করে। তাই চোখের সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের ডিমের কুসুম খাওয়া উচিত। ডিমের কুসুমে অনেক উপকারী দিক রয়েছে আবার অনেক অপকারিতা রয়েছে। যেমন ডিম স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কিন্তু ডিমের স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঙ্গে কিছু স্যাচুরেটেড থাকে যার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া ডিমের কুসুমে ভালো কোলেস্টেরল রয়েছে। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কোলেস্টেরল হাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রক্তের কোলেস্টেরল বেশি হয়ে গেলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কুসুম সহ ডিম অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে চিকিৎসকরা নিরুৎসাহিত করে থাকেন।
ডিমের সাদা অংশের উপকারিতা ও অপকারিতা
ডিমের কুসুমের মত ডিমের সাদা অংশেও রয়েছে অনেক উপকারিতা ও অপকারিতা। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে অনেক উপকারিতা যেমন ডিমের সাদা অংশ দুর্বল হাড়ের জন্য উপকারী। সাদা অংশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এটি আমাদের হাড়কের শক্তিশালী ও মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও ডিমের সাদা অংশ অস্টিওপোরোসিস ও হাড়ের নানান সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। ডিমের সাদা অংশ হৃদপিণ্ড ভালো রাখে।
ডিমের সাদা অংশ রক্ত জমাট বাধা থেকে প্রতিরোধ করে। ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন থাকে। যা আমাদের রক্ত সঞ্চালন করতে সহায়ক করে। ডিমের সাদা অংশ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় অনেক উপকারী। যাদের পেশী জনিত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন কারণ ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা রক্তচাপের স্তর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক করে ও বেশি সচল করে। ডিমের সাদা অংশ খেলে ক্লান্তি দূর হয়। দেহে আয়রনের ঘাটতির জন্য শরীরে ক্লান্তি আসে।
ডিমের সাদা অংশে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাগানিক যা শরীরের ক্লান্তি দূর করে। ডিমের সাদা অংশ পেশির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকে এজন্য এই অংশটিকে পাওয়ার হাউজ বলা হয়ে থাকে। ফলে ডিম মজবুত পেশি গঠনে অধিক সহায়ক। এছাড়াও ডিমের সাদা অংশ ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে, ত্বক টান টান, ব্রণ প্রতিরোধ ও মুখে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিমের সাদা অংশে তেমন কোনো অপকারিতা নেই।
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের জন্য শরীরে বায়োটিন নামক এক ধরনের ভিটামিনের শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ডিমে অনেকেরই এলার্জি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের বেশি ডিম খাওয়ার ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা হতে পারে। আবার বেশি ডিম খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া হতে পারে।
ডিমের সাদা অংশে কি থাকে না
ডিমের সাদা অংশে রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাই ডিমের সাদা অংশের কি থাকে না এটা ধারণা করা খুব মুশকিল। তবে ডিমের সাদা অংশে আমাদের দেহের জন্য কোন ক্ষতিকর চর্বি থাকে না এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ ১% ও কম থাকে।
ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক
ডিম খাবার হিসেবে বেশ উপকারী তবে ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক ও আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ডিম দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের যত্নের ডিম নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কুসুম ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু সাদা অংশ ব্যবহার করলেই হবে ত্বকে। চলুন তবে জেনে নেই ডিমের সাদা অংশ কিভাবে রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফেসপ্যাক তৈরিতে ডিম ও লেবুর ব্যবহার
এ ফেসপ্যাকটি ব্রণ দূর করতে বিশেষ কার্যকরী। একটি ডিম ফেটিয়ে ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুমটি আলাদা করে সাদা অংশের সঙ্গে আধা চা চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ত্বকে লাগিয়ে ১৫মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে এলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ত্বকে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ ও কমলার ফেসপ্যাক
এই ফেসপ্যাকটি পিগমেন্টেশন দূর করতে এবং অমসৃণ ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী। এই মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রথমেই একটি ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে এরপর তার সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ ১ টেবিল চামচ কমলার রস মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে এবং ঘাড়ে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ, দই ও অ্যাভোকাডো
এ ফেসপ্যাকটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করবে এবং চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করার জন্য একটি ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে। ডিমের সাদা অংশটির সাথে এক টেবিল চামচ দই এবং একটি অ্যাভোকাডোর চার ভাগের এক ভাগ পাটায় পিষে নিয়ে ভালোভাবে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। পেস্টটি মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিতে হবে। কিছু মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ, মধু ও শসা
ডিমের সাদা অংশ, মধু ও শসা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বেশ উপযোগী। এটি ত্বককে ঠান্ডা করে থাকে এবং আরামদায়ক অনুভূতি দিয়ে থাকে। এ ফেসপ্যাকটি তৈরীর জন্য প্রথমে একটি ডিমের সাদা অংশ নিতে হবে। এক চা চামচ দই এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ শসার রস নিতে হবে। এরপর সবগুলো একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
ডিমের কুসুম দিয়ে রূপচর্চা
সাদা অংশের মতো ডিমের কুসুম দিয়েও রূপচর্চা করা যায়। ডিমের কুসুমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ ভিটামিন ই ভিটামিন ডি প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। ডিমের কুসুম ত্বক ঝকঝকে করতে অনেক সহায়ক। তাহলে চলুন জেনে নিই ডিমের কুসুম দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করা যায়।
ডিমের কুসুমের ফেসপ্যাক
এই ফেসপ্যাক শুষ্ক ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। একটি ডিম নিয়ে ডিমের সাদা অংশ কুসুম থেকে আলাদা করে নিতে হবে। এরপর এই কুসুমটির সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। ফেসপ্যাকটি তৈরি করা হয়ে গেলে মুখ ভালোভাবে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ফেসপ্যাকটি ধুয়ে ফেলতে হবে।
ব্ল্যাকহেডস দূর করতে ডিমের কুসুমের ব্যবহার
সাদা অংশ থেকে ডিমের কুসুমকে আলাদা করে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। এরপর তা ব্রাশে নিয়ে নাকের চারপাশে লাগিয়ে নিতে হবে। নাকের ওপর কুসুমটি লাগানো হয়ে গেলে একটি টিস্যু পেপার নাকের ওপর লাগিয়ে নিতে হবে। নাকের উপর দেওয়া ডিমের কুসুমের প্রথম লেয়ারটি শুকিয়ে গেলে টিস্যুর উপরে আরেকটি লেয়ার দিতে হবে। এরপর পুরো ফেসপ্যাকটি শুকিয়ে গেলে কাগজগুলোকে ভালোভাবে টেনে তুলে ফেলতে হবে। এর ফলে কাগজের সঙ্গে ব্ল্যাক হেডস গুলো উঠে আসবে।
ব্রণ প্রতিরোধে ডিমের কুসুম ব্যবহার
অনেকেরই দেখা যায় তাদের ত্বক অনেক তৈলাক্ত। আর তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে একটি ডিমের কুসুম এক চা চামচ মধু এবং একটা চামচ বাদাম তেল নিয়ে মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ফেসপ্যাকটি মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
ত্বক উজ্জ্বল রাখতে ডিমের কুসুমের ব্যবহার
ত্বক উজ্জ্বল রাখার জন্য ফেসপ্যাক তৈরিতে একটি ডিমের কুসুম এক চামচ ঘন ক্রিম এবং এক চামচ গাজর রস মিশিয়ে নিয়ে ফেসপ্যাকটি তৈরি করতে হবে। ফেস প্যাকটি লাগিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করার পর শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে।
ডিমের সাদা অংশ চুলে দিলে কি হয়
ডিমের সাদা অংশ চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। আমরা অনেকেই হয়তো সেটা জানিনা। তাহলে আসুন জেনে নিই ডিমের সাদা অংশ চুলে দিলে কি হয়।
ডিমের সাদা অংশ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারন ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন যেমন নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যবিন, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাসিয়াম যা চুলের সুসাস্থ্যের জন্য উপযোগী। ডিমের কুসুম চুল ঘন ও মজবুত করে তোলে এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। ডিমের কুসুম শুষ্ক চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি চুল নরম করতে ও চুলের খুশকি দূর করতে সহায়তা করে।
চুলে ডিম ব্যবহারের নিয়ম
কে না চায় নিজের চুলকে সুন্দর করে তুলতে। আর ডিম আমাদের চুলকে ঘন ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে তোলে। তাহলে চলুন চুলে ডিম ব্যবহারের নিয়মগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
চুলকে উজ্জ্বল এবং সুন্দর করতে ডিমের ব্যবহার
একটি ডিম আধা কাপ টক দই এবং এক চা চামচ অলিভ ওয়েল কিংবা আমন্ড ওয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে 40-45 অপেক্ষা করতে হবে এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে চুল হবে উজ্জ্বল ও সুন্দর।
চুলকে নরম এবং উজ্জ্বল করতে ডিমের ব্যবহার
একটি ডিমের সাদা অংশ কুসুম থেকে আলাদা করে ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে এরপর পুরো চুলে মাস্ক হিসেবে লাগাতে হবে। এই মিশ্রণটি নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ চুলের জন্য উপকারী। মাস্ক লাগানোর পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রনটি চুলকে নরম ও উজ্জ্বল করে তুলবে।
চুলের ড্যামেজ সরাতে ডিমের ব্যবহার
একটি ডিম, একটি কলা, তিন চা চামচ দুধ, তিন চা চামচ মধু, পাঁচ চা চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে সবকিছু উপাদান একসঙ্গে ভালোভাবে মিক্স করে চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এরপর ১৫ থেকে 20 মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি চুলের ড্যামেজ সরাতে সহায়তা করে।
চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে ডিমের ব্যবহার
একটি ডিমের কুসুম থেকে সাদা অংশটি আলাদা করে তার সাথে অলিভ অয়েল ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করতে হবে। এরপর একটি মাথার তালুতে লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।
সপ্তাহে কতদিন চুলে ডিম দেওয়া উচিত
সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুলের জন্য অন্তত সপ্তাহে একবার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট জরুরি। বাসায় এই ট্রিটমেন্টটি করা যেতে পারে। চলুন জেনে নিই সপ্তাহে কতদিন চুলে ডিম দেওয়া উচিত।
সপ্তাহে একবার ব্যবহৃত ডিমের হেয়ারপ্যাক
একটি ডিম ফেটিয়ে নিতে হবে ও একটি কলা চটকে নিতে হবে। এরপর ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ৩ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ ও তিন টেবিল চামচ মধু নিয়ে সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মেশাতে হবে। এই প্যাকটি মেশানো হয়ে গেলে এটি চুলে লাগাতে হবে এবং ১ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নরম ও ঝলমলে চুল পেতে সপ্তাহে একবার এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করতে হবে।
সপ্তাহে দুইবার ব্যবহৃত ডিমের হেয়ার প্যাক
এই হেয়ার প্যাকটির জন্য দুইটি ডিম লাগবে। দুটি ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুমটিকে আলাদা করে নিতে হবে। ডিমের কুসুমের সাথে আধা কাপ টক দই ও দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে সেটি চুলে লাগাতে হবে। চুলে শাওয়ার ক্যাপ পরে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর
১. প্রতিদিন কয়টি ডিম খেলে কোন ক্ষতি হবে না ?
ডিমে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। যা শরীরে নানান ভাবে ক্ষতি করতে পারে। তাই কিছু বছর আগেও মনে করা হতো ডিম অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য মোটেও ভালো না। এই ধারণাটি বর্তমানে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। চিকিৎসকরা প্রতিদিন তিনটি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
২. একটি সিদ্ধ ডিমের কত ক্যালরি থাকে ?
একটি সিদ্ধ ডিমে প্রোটিন থাকে ৬ গ্রাম, ভালো স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে ৫ গ্রাম ও আরো থাকে ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড সুতরাং সবমিলিয়ে একটি সিদ্ধ ডিমে থাকে ৭২ ক্যালরি।
৩. ডিম খেলে কি ওজন বাড়ে ?
ডিমের কুসুম শরীরের খারাপ কলেস্টরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে ডিমের কুসুম শৈলের অতিরিক্ত চর্বি কমায় তাই ডিম খেলে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৪. সকালে খালি পেটে ডিম খেলে কি হয় ?
আপনি যদি সকালে খালি পেটে একটি ডিম খেতে পারেন তবে ৬ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাবেন যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুব উপকারী।
৫. ছেলেদের চুলে ডিম দিলে কি হয় ?
ছেলেদের চুলে ডিম দিলে চুলের বৃদ্ধি, চুল পরা, চুলের গোড়া মজবুত, কোমল, নরম, জেল্লাদার হয়। চুলের গোড়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
৬. সপ্তাহে কত দিন চুলে ডিম দেওয়া উচিত ?
ডিম ত্বর্কে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে। ফলের চুল পড়াও কমে। চুলের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে সপ্তাহে দুই তিন দিন চুলে ডিম দেওয়া উচিত।
৭. ডিম কি সরাসরি তুলে লাগানো যায় ?
ডিমের মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আপনার ত্বক ও শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই ডিম আপনি সরাসরি আপনার চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না।
৮. সারারাত কি চুলে ডিম রাখা যাবে ?
ডিম প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর আমরা সবাই জানি ডিম চুলের যত্নে খুব উপকারী। কিন্তু সারারাত চুলে ডিম দিয়ে ঘুমালে চুল গন্ধ হতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তাই রাতে ডিম না দিয়ে সকালে গোসলের এক ঘণ্টা আগে ডিম মাথাযর চুলে ব্যবহার করুন। এতে ভালো উপকার পাবেন।
ডিম খাওয়ার সতর্কতা
আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সাথে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ডিমের মধ্যে যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল থাকে। তাই অতিরিক্ত ডিম খেলে কোলেস্টেরল হাই হয়ে যেতে পারে ফলে রক্তে শর্করা বেড়ে গিয়ে হৃদরোগ হতে পারে।
লেখকের শেষ কথা -ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডিম আমাদের শরীরের জন্য খুব পুষ্টিকর একটি খাবার ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এবং এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরে নানান ধরনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডিমের কুসুমের মধ্যে এমন কিছু প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালো করে জেনে ডিম খেলে অবশ্যই আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
তাছাড়া ডিম আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো সরবরাহ করে আমাদের ত্বক ভালো রাখতে, চুল ও হার মজবুত করতে এবং মাংসপেশীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খেলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, হৃদরোগের ঝুকি কমে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়।
প্রিয় স্বাস্থ্য সচেতন বন্ধুরা, আপনাদের যদি ডিমের কুসুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ক আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না আর এরকম আরো বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখুন কারন আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটে এরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। এখন আমার যাবার সময় হয়ে গেছে। আজকে তাহলে এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ, এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url