গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা ও বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে না থাকেন তবে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেল পড়লে আপনি জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ছাড়াও আর্টিকেলে আমরা আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা, সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা, বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।
পেজ সূচিপএ
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হিসেবে আমরা কলা কে চিনি। তাছাড়াও কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও মিনারেল। যা একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। আসুন তাহলে জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কলাতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ উঠানামা করে আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে কাঁচা কলা।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সাধন
আমরা সবাই চাই গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ হোক। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফলিক এসিড যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ করতে সাহায্য করে।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
গর্ভকালীন সময় প্রতিটি মায়ের জন্য হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে থাকা প্রয়োজন। শরীরে। আর হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা গর্ভবতী মায়ের শরীরে বাড়াতে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
গর্ভাবস্থায় সবচাইতে বেশি যে সমস্যাটা দেখা দেয় তা হল গ্যাস, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফেপে যাওয়া, বদহজম, বমি বমি ভাব গর্ভাবস্থার প্রধান সমস্যা। কাঁচা কলার খাদ্য পেট পরিষ্কার রাখে এবং গর্ভাবস্থায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা জানার পরে বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব। আমরা সবাই জানি কলার মধ্যে বিভিন্ন জাত বা প্রকারভেদ রয়েছে এগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জাত হলো বিচি কলা। সাধারণত এই কলার মধ্যে বড় বড় তিন-চারটে কিংবা তারও বেশি বিচি থাকে। সেজন্যই এই কলা বিচি কলা নামে পরিচিত।
আমরা জানি সব কলায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে এই বিচি কলা সাধারণত বেশিরভাগ বিভিন্ন ওষুধে ব্যবহৃত হয়। তাই এই কলার উপকারিতা একটু বেশি। আসুন তাহলে জেনে নিই বিচি কলা খেয়ে কি কি রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
- যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন বিচি কলা খেতে পারে। বিচি কলা কোষ্ঠকাঠিন্য, জ্বর কিংবা শরীরের কোন ক্ষতস্থানের রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাক জনিত রোগ ধ্বংস করে।
- গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং আলসার রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কলা কিডনির যেকোন সমস্যার জন্য ভালো। কিডনিতে পাথর হয়ে গেলে পাথর নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।
- কৃমি জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং পেটে কৃমি বৃদ্ধি পেতে দেয় না।
- তাছাড়া মলদ্বারে যে কোন সমস্যায় বিচি কলা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম
প্রত্যেকটা জিনিসই খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে আর আমরা যদি নিয়ম মেনে তা খেতে পারি তবে সঠিক উপকার পাব। বিচি কলা আমরা পাকা কিংবা রান্না করে দুই ভাবে খেতে পারি। বিচি কলা পাকা খেলে যেমন আপনার উপকার হবে তেমন রান্না করে খেলেও আপনি উপকৃত হবেন। বিচি কলা পাকা আপনি সকালের নাস্তার সাথে কিংবা বিকালে খেতে পারেন।
দিনে ১০/১২ টি কলা খেতে পারেন এতে কোন সমস্যা হবে না। আর যদি আপনি রান্না করে খেতে চান তবে বিভিন্ন উপকরণের সাথে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন। রান্না করে খেলেও কলার পুষ্টিগুণ সঠিক থাকবে। তবে গর্ভাবস্থায় কোন খাবারই বেশি খাওয়া উচিত নয়। সঠিক পরিমাপে প্রত্যেকটা খাবার খাওয়া উচিত। তাই কলা ও প্রতিদিন অতিরিক্ত গ্রহণ না করে যতটুক প্রয়োজন ততটুক খাওয়া উচিত।
কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। কাঁচা কলায় এমন একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য যে আমাদের শরীরের জন্য উপকার বেশি করে থাকে। একটি মাঝারি আকারের কলায় আনুমানিক ১০০ ক্যালরি থাকে এবং আমাদের শরীরে প্রচুর পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। কলার মধ্যে যে সব পুষ্টিগণ রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
পটাশিয়াম
কাঁচা কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম হার্টকে ঠিক রাখতে এবং পেশিগুলোকে সচল রাখতে ও উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি
সবুজ কলা হলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যা প্রায় আমাদের শরীরে ১১ শতাংশ ডিবি প্রদান করে। ভিটামিন সি একটি কার্ডিনাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা একটি সুস্থ শরীর এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক তৈরি করে।
ভিটামিন বি-৬
কাঁচা কলার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি ৬। যা দৈনিক মূল্যের ২৫%। ভিটামিন বি-৬ খাবারকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় এবং লাল রক্ত কণিকা আমাদের দেহে তৈরি করে।
খাদ্য তালিকাগত ফাইবার
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার থাকার ফলে আমাদের খাদ্য অতি দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ম্যাগনেসিয়াম
কাঁচা কলার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলার উপকারিতা
আসুন তাহলে জেনে নেই কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
ওজন কমে
আপনি কি আপনার ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচা কলার রেসিপি রাখুন। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার দীর্ঘক্ষণ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখে। ঘন ঘন ক্ষুধা পায় না এবং অনেক সময় না খেয়ে থাকা। যায় ফলে ধীরে ধীরে মেদ ওজন কমতে থাকে।
বদহজম সমস্যা দূর করে
কাঁচা কলা পেটের ভেতরে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। আপনার যদি কোন কারনে বদহজম হয়ে থাকে কিংবা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই কাঁচা কলা খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।
হাড় চুল এবং ত্বকের জন্য উপকারী
কাঁচা কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬। আর কলার মধ্যে থাকা এগুলো উপাদান হাড় মজবুত করতে, চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করতে সাহায্য করে। এছাড়া আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
হৃদরোগের ও কিডনির ঝুকিঁ কমে
কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম।যা হৃদরোগের ঝুকি কমায় এবং কিডনির যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
কলাতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি৬। ভিটামিন বি ৬ টাইপ টু ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আশঁ থাকার কারণে কলা রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কলা রক্তনালী ও ধমনীর ওপর চাপ কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
১. পাকা কলা খেলে কি পেট পরিষ্কার হয় ?
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন পাকা কলা খেতে পারেন। ফাইবার থাকার কারণে পাকা কলা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
২. কলা যাদের খাওয়া উচিত নয় ?
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা কলা খাবেন না এতে ক্ষতি হতে পারে।
৩. কলা খেলে কি কি রোগ হয় ?
কলা শরীরের জন্য উপকারী তবে বেশি খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা, পেট ফাঁপা, সুগারের সমস্যা এবং দাঁত হলদে হয়ে যেতে পারে।
৪. পেট খারাপ হলে পাকা কলা খাওয়া যাবে কি ?
পেট খারাপ হলে শরীরের দেখা দেয় পটাশিয়ামের অভাব। আর পাকা কলায় রয়েছে পটাশিয়াম। তাই পেট খারাপ হলে পাকা কলা খাওয়া খুব উপকারী।
৫. কলা খাওয়ার পর পেপসি খাওয়া যাবে কি ?
কলা খাওয়ার পর পেপসি খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে তাই কলা ও পেপসি একত্রে না খাওয়াই ভালো।
৬. কাঁচা কলা কি ফ্রিজে রাখা যাবে ?
হ্যাঁ অবশ্যই, আপনি চাইলেই কাঁচা কলা ফ্রিজে রাখতে পারেন। তবে আপনি যদি কাঁচা কলা পাকিয়ে খেতে চান তবে ফ্রিজে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
গর্ভাবস্থায় পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। কলাতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ উপাদান যা গর্ভবতী মা ও শিশু দুজনের স্বাস্থ্যের জন্যই খুব উপকারী গর্ভবতী মায়ের পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হলোঃ
ফোলেট সরবরাহ করে
গর্ভাবস্থায় ফোলেট গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশ করে থাকে। পাকা কলাতেরয়েছে পর্যাপ্ত ফোলেট যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের বিকাশে সহায়তা করে।
আয়রনের উৎস
গর্ভাবস্থায় আয়রনের সমস্যা হলে রক্তশূন্যতার হতে পারে। পাকা কলার মধ্যে রয়েছে আয়রন । যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং রক্তশূন্যতা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
শক্তি যোগান
পাকা কলার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করতা, যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে দ্রুত শক্তি প্রদান করে।
গ্যাসের সমস্যা কমায়
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের গ্যাসের সমস্যা কিংবা এসিডিটি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি পাকা কলা খান তবে পাকা কলা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং এসিডি কমাতে সাহায্য করে।
বমি বমি ভাব কমায়
একটি পাকা কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি৬। আর এ ভিটামিন বি৬ গর্ভবতী মায়ের বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়ক
পাকা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুব সাধারণ সমস্যা গর্ভবতী প্রত্যেকটি মায়ের জন্যই এ সমস্যাটি দেখা দেয়। কলাতে থাকা আশঁ একজন গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
মেজাজ ঠিক রাখে
কলাতে রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি উপাদান। যা একজন গর্ভবতী মায়ের মেজাজ ভালো রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পাকা কলা খাওয়ার পরে শরীরে একটি বাড়তি শক্তি বৃদ্ধি পায় যা মানসিক শান্তি এনে দেয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে
পাকা কলার মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন এবং শিশুর হাড়ের বিকাশের সহায়তা করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় পাকা কলা খাওয়া নিরাপদ ও পুষ্টিকর হলেও এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত না। আসলে গর্ভাবস্থায় কোন খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে উপকারের চাইতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় বেশি থাকে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায় একমাত্র কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়ামের উপাদানের জন্য। কলার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের পেশিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কলা আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি যোগান দিয়ে থাকে।
সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার ফলে আপনার শরীর কিছুটা দুর্বল কিংবা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই রাতে খাবার খেয়ে যদি আপনি একটি কলা খেতে পারেন তাহলে শরীরে ক্লান্তি অনেকটা দূর হয় এবং কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রাতে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
উপরের আলোচনায় আমরা জেনেছি রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা এখন আমরা জানবো সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। রাতে কলা খেলে যেমন আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার হয় তেমন সকালে কলা খেলেও শরীরে অনেক ধরনের উপকার হতে পারে। সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাই। কলাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে খুব দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
কলাতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যাদের প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে না তারা প্রতিদিন সকালে একটি করে কলা খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন অনেক। তাছাড়া কলার মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সকালে কলা খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং কলাতে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি উপাদান সারাদিন আপনার মন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার আগে কলা উপকারিতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। আমরা উপরে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কলা খেলে কি কি উপকার হয় আমাদের শরীরে তাও উপরের আলোচনা থেকেই বুঝতে পেরেছি। তাহলে আসুন এখন জেনে নেই নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। কলা ফল আমাদের কম বেশি সব মানুষেরই পছন্দ। প্রতিদিন কিংবা সপ্তাহে তিন চার দিন আমরা কলা খেয়ে থাকি।
কিন্তু অনেকেই জানিনা যে নিয়মিত কলা খেলে উপকারিতা রয়েছে অনেক। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তাদের জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য। নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন। আপনার শরীর সুস্থ থাকতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কলা একটি আঁশযুক্ত খাবার এবং কলাতে রয়েছে ফাইবার যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
কলাতে ফাইবার থাকার কারণে অনেকক্ষণ পেট ভরে থাকে এবং ঘনঘন ক্ষুধা পায় না। এটা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরে আপনার শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে আপনি অবশ্যই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আপনার পেশিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। কলাতে থাকা আইরন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
কলার মধ্যে ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি উপাদান রয়েছে যা সারা দিনের আপনার মেজাজ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ত্বকের যত্নে, কিডনি সুস্থ রাখতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, দাঁতের মাড়ি মজবুত করতে এবং বদহজম, বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, পেটের যে কোন সমস্যা দূর করতে কলার কোন জুড়ি নেই। তাই আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখার চেষ্টা করুন। পাকা কলা কিংবা রান্না করে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলার উপকারিতা সম্পর্কে জানলাম এখন আমরা জানবো কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। প্রতিটি খাবারে যেমন উপকার হয় তেমন খুব অল্প পরিমাণের হলেও ক্ষতি হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকের কলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। যাদের ঠান্ডা লেগে থাকে কিংবা ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদের পাকা কলা বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো কিংবা দুপুরের দিকে কলা খাওয়া উচিত।
তাহলে কলা থেকে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে কলা খাওয়ার ব্যাপারে। কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কলা খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া কলা একটি ভারী খাবার তাই খুব বেশি পরিমাণে খেলে আপনার ওজন তুলনামূলকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ মনে রাখতে হবে যে ফরমালিনযুক্ত কলা খেলে উপকার থেকে অপকার বেশি হয়।
তাই কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই চেক করে নেবেন কলায় ফরমালিন দেওয়া আছে কি না। আপনি নিয়ম মেনে সঠিক সময় সঠিক পরিমাণে কলা খেলে কলাতে থাকা প্রতিটি পুষ্টি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে। তাই কলার অপকারিতার কথা চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলা খান তবে অবশ্যই উপকার পাবেন।
লেখক এর শেষ কথা
আমরা আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে যতটুক জানলে আপনি উপকৃত হবেন আমরা যথাসম্ভব ততটুকু জানানোর চেষ্টা করেছি।
আশা করি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনি গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় বিচি কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খাওয়ার নিয়ম, কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা, কলা খাওয়ার অপকারিতা, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা ও সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই অন্যদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিন। আর কলা সম্পর্কে আপনার যদি আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করব আবার নতুন কিছু জানানোর জন্য।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url