স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - টবে স্টবেরি চাষ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনে যারা খেয়ে থাকেন সাধারণত তাদের আগেই বিষয়গুলো জানা উচিত। স্ট্রবেরি একটি পুষ্টিকর খাদ্য তাই স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে স্ট্রবেরি খেলে সঠিক পুষ্টিগুণ পাবেন।
যারা স্ট্রবেরি খেতে অনেক পছন্দ করেন তাদের বীজ থেকে স্ট্রবেরি চারা তৈরীর পদ্ধতি ও টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো ছাড়াও আমরা গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
পেজ সূচিপএ
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল হিসেবে স্ট্রবেরি পরিচিত। স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে স্ট্রবেরি খাওয়া হলে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। আসুন তাহলে জেনে নেই স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা
- ভিটামিন সমৃদ্ধ: স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং আরো রয়েছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি। আর এই ভিটামিন গুলো আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট: স্ট্রবেরির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে আমাদের শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এছাড়া স্ট্রবেরির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমানে পটাশিয়াম। আর এ পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি কমায়।
- হজমের সহায়তা: স্ট্রবেরির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আর আমরা সবাই জানি ফাইবার আমাদের হজমের সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় ও পেট পরিষ্কার রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রবেরিতে রয়েছে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি। আর ক্যালরি কম খাবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। তাছাড়া ফাইবার থাকার জন্য আমাদের অনেকক্ষণ স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কম পায় যার ফলে ঘন ঘন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রবেরির মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার কারণে এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
স্ট্রবেরির অপকারিতা
- কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর: যাদের কিডনি সমস্যা হয়েছে তাদের জন্য স্ট্রবেরি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ স্ট্রবেরিতে অক্সালেট নামক একটি যৌগ থাকে যা আমাদের শরীরের ভেতরে গিয়ে ক্যালসিয়ামের সাথে মিশে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন তৈরি করে। তাই যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের শরীরে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে অক্সালেট প্রবেশ করে তাহলে কিডনির পাথরের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। এমনকি কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রবেরির ভেতরে নিউরোট্রক্সিন থাকে। আর নিউরোটক্সিন কিডনি আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে স্ট্রবেরি খাওয়ার ফলে তাদের বমি বমি ভাব, স্বাভাবিক দুর্বলতা ও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। কিডনি রোগীরা স্ট্রবেরি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
- এলার্জি: কার কোন খাবারে এলার্জি আছে এটা বোঝা খুব কঠিন কিছু কিছু মানুষের স্ট্রবেরি খাওয়ার পরে এলার্জির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি ত্বকের সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- গ্যাসের সমস্যা: অনেকেই স্ট্রবেরি খাওয়ার পরে হজম করতে পারে না কিংবা হজমের সমস্যা দেখা দেয়। আর তার ফলেই সৃষ্টি হয় গ্যাস। গ্যাসের সমস্যা হলে আমাদের পেট ব্যথা, পেট ফোলা ও বুক জ্বালাপোড়া করে। আপনার যদি স্ট্রবেরি খাওয়ার পরে এমন কোন সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
টবে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। কারণ আমাদের শহর এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে জমি থাকে না। কিন্তু স্ট্রবেরি চাষ করতে কিংবা নিজের হাতে স্ট্রবেরি গাছ লাগিয়ে খেতে অনেকেরই ইচ্ছা হয়। তাদের জন্য স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি স্ট্রবেরি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। স্ট্রবেরি আপনি টবে করে বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দাতেও চাষ করতে পারেন। কিভাবে স্ট্রবেরি টবে চাষ করে আপনি প্রচুর পরিমাণে ফলন পাবেন এবং পুষ্টিকর স্ট্রবেরি খেতে পারবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- মাটি তৈরি: স্ট্রবেরি গাছ লাগানোর জন্য সর্বপ্রথম যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা হল মাটি সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে। সাধারণত মাটির নিতে হবে চার ভাগ, দুই ভাগ সাধারণ বালি নিতে হবে, ঘর বাড়ি তৈরি করার জন্য আমরা যে বালি ব্যবহার করি সেই বালি ব্যবহার করলেই হবে। দুই ভাগ নিতে হবে কম্পোজ সার, এবং দুই ভাগ পরিমাণ নিতে হবে কোকোপিট এবং তিন থেকে চার চামচ নিতে হবে হর মিল্ক।
- টব নির্বাচন: ছয় ইঞ্চি পরিমাণ একটি টপ নির্বাচন করতে হবে তবে নিচে অবশ্যই একটু ফুটো রাখতে হবে। কারণ পরিমাণ মতন জল গাছের গোড়ায় থেকে অপ্রয়োজনীয় জল যেন বের হয়ে যেতে পারে। সর্বপ্রথম টবের মধ্যে পাথরের কিছু ছোট টুকরো দিয়ে দিতে হবে। তারপর কিছু পরিমাণে সাধারণ বালি দিতে হবে এবং উপরের টব মাটির ভেতরে মিশ্রিত করা উপাদান গুলো আস্তে আস্তে টবের ভেতরে দিয়ে দিতে হবে।মাটিগুলো হাত দিয়ে সমান করে নিতে হবে এবং আস্তে আস্তে স্ট্রবেরি গাছের চারা টবের ভেতরে রোপন করুন। তারপরে আরেকটি টব নির্বাচন করুন এবং আগের টপ এর চেয়ে একটু পরিমাণে চ্যাপ্টা হবে। আগের মত একই পদ্ধতিতে পাথর, মাটি ও বালু দিয়ে দিতে হবে এবং স্ট্রবেরি গাছ লাগানো টবটি চ্যাপ্টার টবের উপরে রেখে দিতে হবে।
- গাছের পরিচর্যা: স্ট্রবেরি গাছ লাগানোর সাথে সাথেই গাছের যে পাতাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা শুকিয়ে গেছে সে পাতাগুলো অবশ্যই কেটে ফেলতে হবে। তাছাড়া স্ট্রবেরি আছে ফল আসা পর্যন্ত প্রতিমাসে একমুঠো করে ভার্মি কম্পোস্ট সার দিতে হবে। মাসে একবার করে নিম তেল স্প্রে করতে হবে।
- স্ট্রবেরি গাছে ফল আসার আগে: ফল আসার আগে স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে পরিচর্যা গুলো করা হবে তার ওপরে নির্ভর করবে স্ট্রবেরি ফলের ভালো ফলন। স্ট্রবেরি গাছে যদি কোন মরা পাতা থাকে তাহলে সে পাতাগুলো কেটে ফেলে ভালো করে গাছটিকে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং তারপর পরিমাণ মতো সার দিতে হবে। দুই চামচ সর্ষের ঘোল তার সাথে নিতে হবে এক চামচ হাড়ের গুড়োর পাউডার এই উপাদান দুটিতে অনেক পরিমাণে ফসফরাস এবং সামান্য পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যার ফলে স্ট্রবেরি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসবে, গাছের শিকড় মজবুত হবে এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। উপাদান গুলি ভালোভাবে মিশিয়ে টবের ভেতরে তিন থেকে চার চামচ চারিদিকে ছড়িয়ে দিন এবং একটি লাঠির সাহায্যে ভালোভাবে সারগুলো মাটির ভেতরে ঢুকিয়ে দিন তারপর সামান্য পরিমাণ জল গাছের ওপরে ছিটিয়ে দিন। গাছগুলো অবশ্যই হালকা ছায়া জায়গায় রেখে দিন। দুই তিন দিন পরে গাছে নিম তেল স্প্রে করুন এতে ফল আসার আগে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে। বাড়িতে খুব ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি নিম কীটনাশক তৈরি করে নিতে পারেন।
বীজ থেকে স্ট্রবেরি চারা তৈরি পদ্ধতি
বীজ থেকে স্ট্রবেরি চারা তৈরীর পদ্ধতি আপনার যদি জানা থাকে তাহলে অবশ্যই বাইরে বীজ কিনতে যেতে হবে না। আর আপনি খুব ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত বীজ বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারবেন। আসুন তাহলে জেনে নেই স্ট্রবেরির বীজ থেকে স্ট্রবেরি চারা তৈরির পদ্ধতি।
বীজ থেকে স্ট্রবেরির চারা তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি ভালো স্ট্রবেরি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসতে হবে এবং স্ট্রবেরি ওপরে যে বীজ রয়েছে সেগুলো লক্ষ্য করতে হবে। বীজগুলো ভালোভাবে কালো হয়ে গিয়েছে কিনা। যদি বীজ গুলো ভালোভাবে কালো হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেগুলোর চারা উৎপাদনের জন্য একদম উপযুক্ত। আর যেগুলো হলুদ কিংবা সবুজ ভাব হয়ে আছে সেগুলো চারা উৎপাদনের জন্য খুব ভালো হবে না।
তাই সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির উপরের বীজগুলো কালো কিনা সেটা দেখে নিতে হবে। প্রথমে ছুরি দিয়ে ভালো ভাবে স্ট্রবেরি থেকে বীজগুলো বের করে নিতে হবে। তারপর একটি পাত্রে বীজগুলো নিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন স্ট্রবেরির আশঁ বীজের মধ্যে না থাকে। বীজগুলো ভালোভাবে ধোয়া হয়ে গেলে একটি টিস্যু পেপারে বীজগুলো নিয়ে একটি প্লাস্টিক বাটির ভেতরে টিস্যু পেপারটি রেখে দিয়ে তাতে একটু পানি স্প্র করে নিতে হবে এবং প্লাস্টিকের বাটির উপরের অংশ পলাথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
অবশ্যই বাটিটি ঠান্ডা ও শুকনোস্থানে রাখতে হবে। ১১-১২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ১১-১২ দিন পরে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন বীজগুলো থেকে ছোট ছোট শিকড় বের হয়েছে। বীজগুলো আরো ভালোভাবে শিকড় গজানোর জন্য আমরা একটি ছোট মাটির ভেতরে টিস্যু পেপারটি রেখে বীজগুলোর ওপরে কিছু মাটি দিয়ে পানি স্প্রে করব এবং দুই সপ্তাহ পরে দেখব আস্তে আস্তে বীজ থেকে চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে।
স্ট্রবেরি দিয়ে রূপচর্চা
স্ট্রবেরি দিয়ে রূপচর্চা, স্ট্রবেরি যেমন পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার তেমন আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। স্টবেরির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন যা প্রাকৃতিক ভাবে আপনার ত্বক সুন্দরভাবে উজ্জ্বল রাখে। তাছাড়া ত্বকের মধ্যে ব্রনের দাগ, চোখের নিচে কালো দাগ, মুখের ছোপ ছোপ দাগ ও ত্বকের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। তাহলে জেনে নিন স্ট্রবেরি দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করবেন।
স্ট্রবেরি ও কফি
কিছু পরিমাণে স্ট্রবেরি নিয়ে বিলিন্ডারে ব্যালেন্ট করে নিন এবং পরিমাণ মতো কফি পাউডার মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। যদি পেস্টটি শক্ত মনে হয় তবে একটু পানি মেশাতে পারেন। এই মিশ্রণটি আপনি আপনার ত্বকে পাঁচ মিনিট মেসেজ করুন এবং পাঁচ মিনিট পর ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে যদি আপনি স্ট্রবেরি ও কফি একসাথে ব্যবহার করতে পারেন তবে আপনার ত্বকের মধ্যে নিয়ে আসবে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। পাশাপাশি ত্বকের ভেতরের মরা চামড়াগুলো করবে সতেজ। মুখের বিভিন্ন দাগ তুলতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন এতেই ভালো উপকার পাবেন।
স্ট্রবেরি ও কমলা
কিছু পরিমাণ স্ট্রবেরি নিয়ে দু-একটা কমলার কোয়া দিয়ে একসঙ্গে বিলিন্ডারে বিল্ড করে নিন। মুখ ও গলার নিচে ভালোভাবে ঘষে ঘষে মেসেজ করুন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। PH লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ফেসপ্যাকটি খুব কার্যকরী। তাছাড়া ত্বকের কালচে ভাব দূর করার জন্য এই দুই ফলের এ্যাসিডিক উপাদান একসাথে কাজ করে। এটি আপনাকে সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে তাহলে নিজেই এর ফলাফল বুঝতে পারবেন।
স্ট্রবেরি ও মধু
স্ট্রবেরি ও মধু ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। আপনি যদি প্রতিদিন আপনার ত্বকে স্ট্রবেরি ও মধু ব্যবহার করতে পারেন তবে ত্বকের উপরে জমে থাকা ডার্ক সার্কেল দূর করবে। স্ট্রবেরি ভালো করে বিলিন্ডারে বেল্ট করে মধু বানিয়ে নিতে হবে এবং ত্বকে লাগিয়ে বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ২০ মিনিট পর খুব আলতোভাবে ত্বক থেকে এই ফেসপ্যাকটি ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। এছাড়া স্ট্রবেরি ও মধু আপনার ত্বকের কোমলতা, ত্বকের রুক্ষতা, অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এই ফেসপ্যাকটি আপনি চাইলে প্রতিদিনই গোসলের আগে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
স্ট্রবেরি ও দুধের সর
আমরা সবাই জানি দুধের সর আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী আর যদি আপনি স্ট্রবেরি সাথে দুধের সর ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এ ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে স্ট্রবেরি ভালোভাবেই মিশ্রিন করে নিয়ে তার সাথে এক চামচ মধু ও এক চা চামচ দুধের সর মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। পনেরো থেকে বিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আপনি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার ত্বকের টানটান ভাব, ত্বকের বলিরেখা ও ত্বকের বয়সের ছাপ দূর হবে।
স্ট্রবেরি ও কনফ্লাওয়ার
স্ট্রবেরি হাত দিয়ে ভালো করে চটকে নিন এবং তার সাথে এক চামচ কনফ্লাওয়ার মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কনফ্লাওয়ার যদি আপনি একসাথে ব্যবহার করেন তাহলে রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল সতেজ।
গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে উপকারিতা সম্পর্কে পড়ুন। গর্ভাবস্থায় আমরা ফলের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকি। কোন ফল খেলে আমাদের উপকার হয় আর কোন ফল গেলে আমাদের ক্ষতি হয় এই নিয়ে চিন্তায় থাকি। কোন ফলে পুষ্টি বেশি আর কোন ফলে পুষ্টি কম এটা নিয়ে অনেকটা ভাবি।
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এমন কোন ভাবনায় পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পুষ্টিকর ফল হিসেবে এবং আপনার খাদ্য তালিকায় গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি রাখতে পারেন। স্ট্রবেরি একটি সুষম পুষ্টিকর ফল এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণ রয়েছে স্ট্রবেরির ভেতরে। স্ট্রবেরির ভেতরে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালোরি। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে উপকারী যে উপাদানটা দরকার তা হলো ফাইবার। আর স্ট্রবেরির মধ্যে রয়েছে ফাইবার। একজন গর্ভবতী মা প্রতিদিন যদি পরিমাণ মতো স্ট্রবেরি খায় তাহলে গর্ভকালীন সময় তার শরীরে বাড়তি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গর্বের বাচ্চার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তাছাড়া ফাইবার থাকার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত কঠিন সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে পারে। তাছাড়া পটাশিয়াম রক্তচাপ ও গর্ভকালীন সময় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ফাইবারে ক্যালোরি কম থাকার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। একজন গর্ভবতী মা যদি সুগারের রোগী হয়ে থাকে তাহলে রক্তের শর্করতার মাত্রা কমে এবং সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্ট্রবেরি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী ও উত্তর
১. স্ট্রবেরি চারা কোথায় পাওয়া যায় ?
চারা আপনার নিকটস্থ নার্সারি কিংবা বাজারেও পেতে পারেন। তবে সবচাইতে বেশি ভাল হয়, যদি স্ট্রবেরি চারা আপনি বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন। স্ট্রবেরি চারা কিভাবে তৈরি করবেন তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি।
২. স্ট্রবেরি ফল কখন পাওয়া যায় ?
স্টবেরি গাছে সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফুল আসা শুরু করে এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চ পর্যন্ত পাওয়া যায় স্ট্রবেরি ফল।
৩. স্ট্রবেরি কিভাবে খেতে হয় ?
স্ট্রবেরি আপনি কাঁচা অবস্থা খেতে পারেন। তাছাড়া স্ট্রবেরি দিয়ে জ্যাম তৈরি করে, দুধের সাথে স্ট্রবেরি মিশিয়ে, স্ট্রবেরি দিয়ে আইসক্রিম বানিয়ে, স্ট্রবেরি দই তৈরি করে কিংবা বিভিন্ন ফলের সাথে জুস করে।
৪. স্ট্রবেরি গাছ কত দিন বাঁচে ?
স্ট্রবেরি গাছের বাজার নির্ভর করে ভালো স্ট্রবেরি বীজের ওপর। যদি ভালো মানের বীজ এবং গাছের সঠিক পরিচর্যা হয় তাহলে স্ট্রবেরি গাছ এক বছর পর্যন্ত বাঁচে।
৫. স্ট্রবেরি কি একটি মিষ্টি ফল ?
হ্যাঁ, স্ট্রবেরি মিষ্টি, টক ও সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে। তবে কম পরিমাণে মিষ্টি রয়েছে। শরীরের কোন ক্ষতি হবে না।
স্ট্রবেরিতে কি কি ভিটামিন আছে
স্ট্রবেরিতে কি কি ভিটামিন আছে সে সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে স্ট্রবেরি খাওয়ার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিতে পারব। স্ট্রবেরি একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। স্ট্রবেরি ভেতরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক কঠিন রোগ থেকে অনায়াসেই মুক্তি দেয়। স্ট্রবেরির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক এ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালরি, এলার্জিক এ্যাসিড, কুমারিক এ্যাসিড, ফাইটোস্টেরল এছাড়া পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, হাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
স্ট্রবেরি কোন মাসে পাওয়া যায়
স্ট্রবেরি সাধারণত শীতকালীন ফল হিসেবে পরিচিত। নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে কিংবা নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি স্ট্রবেরি গাছে ফুল আসা শুরু করে এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। স্ট্রবেরি ফল প্রথমে সাদা কিংবা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে এবং আস্তে আস্তে লাল বর্ণের রূপ ধারণ করে। আর স্ট্রবেরি ফল খাবার উপযোগী হয়েছে তখনই বোঝা যায় যখন ফলটি লাল বর্ণের এবং ফলের গায়ের বীজগুলো গাঢ় কালো রংঙের হয়।
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার যদি জানা থাকে তাহলে নিজেই বাড়ির টবে, ছাদে কিংবা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ফরমালিনমুক্ত স্ট্রবেরি খেতে পারবেন। তাহলে চলুন স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মাটি প্রস্তুত
ভালো স্ট্রবেরি চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাটি প্রস্তুত। মাটি প্রস্তুত করার জন্য ৩০ শতাংশ মাটি নিতে হবে, কোকোপিট জৈব সার নিতে হবে ৪০ শতাংশ এবং পারলাইট নিতে হবে 10% । এ উপাদান গুলো খুব ভালোভাবে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। একটি টব নিতে হবে এবং সেই টবে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে অপ্রয়োজনে পানিগুলো স্ট্রবেরি গাছের গোড়ায় জমে না থাকে। মাটির সাথে মিশিয়ে রাখা প্রয়োজনীয় সব উপাদান গুলো টবের ভেতর দিয়ে স্ট্রবেরি বীজ রোপন করতে হবে। বীজ রোপনের পর প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে দিতে হবে।
পরিচর্যা
এক মাস পর পর ভার্মি কম্পোস্ট সার গাছের গোড়ায় ও নিম তেল গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে। গাছের বয়স যখন চার মাস হবে তখন ফুল আসার আগে দুই চামচ সর্ষের ঘোল ও তার সাথে এক চামচ হাড়ের গুঁড়ো পাউডার মিশিয়ে নিতে হবে এই উপাদানগুলো গাছের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে।এই উপাদান গুলো আপনার গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল আস্তে সাহায্য করবে। কারণ এই উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফসফরাস ও পটাশিয়াম।
একটি লাঠির সাহায্যে ভালোভাবে সারগুলো টবের ভেতর গাছের গোড়ায় ঢুকিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে দিতে হবে। সপ্তাহে ১৫ দিন পরপর নিম তেল গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে এতে গাছের পাতা পোকা আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। তবে যেভাবে স্ট্রবেরি চাষ করা হয় জমিতে ঠিক একই পদ্ধতিতে ও টবে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়। তবে স্ট্রবেরি চাষ করার আগে জমি ভালোভাবে ট্রাক্টর দিয়ে নিতে হবে এবং মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
লেখকের মন্তব্য - স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা শুরু করে স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা গুলো পেতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত পরিমাণে স্ট্রবেরি খেতে হবে এবং এটি সঠিকভাবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি থেকে আপনি স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।
প্রিয় পাঠক, আপনার যদি স্ট্রবেরি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে আমাদের অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url