খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
প্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। অনেক পোস্ট খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই আজকের এই পোস্টে আমরা খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ও প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি খুরমা খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়া শুরু করি।
খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত ছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা, পুরুষের জন্য খেজুরের উপকারিতা, খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম, সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি অনেক বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়ার চেষ্টা করবেন।
পেজ সূচিপএ
খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে খেজুরের মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে তা আমাদের জানা আগে জরুরী। খুরমা খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, সোডিয়াম, ভিটামিন কে, লোহ, আয়রন, ম্যাগানিজ, ফোলেট বি, পটাশিয়াম, ফাইবার, চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন ই, খাদ্য আশঁ, প্রাকৃতিক চিনি, শর্করা, ক্যালরি, কার্বনহাইড্রেট ও জিংক। আমরা অনেকেই খুরমা খেজুর খেতে পছন্দ করি।
খুরমা খেজুর সাধারণত সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরানের মত দেশগুলোতে হয়ে থাকে। খুরমা খেজুরের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ও সোডিয়াম আপনার দেহের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ও খারাপ কোলেস্টোরল দূর করে শরীরকে ভালো কোলেস্টেোরল মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। খুরমা খেজুর হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপের জন্য খুব উপকারী। ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে। প্রতিদিন খুরমা খেজুর খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। শুকনো খেজুরের মধ্যে রয়েছে শতকরা ৮০ ভাগই চিনি আর এই খুরমা খেজুর খাওয়ার ফলে চিনি সরাসরি রক্ত চলে যায়।
সেজন্য শুকনো খেজুরকে মরুভূমির গ্লুকোজ বলা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে খুরমা খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি যা নার্ভকে শান্ত এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে অ্যামিনোফ এসিড ও ট্রিপটোফ্যান। যা হরমোন তৈরিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খুরমা খেজুর একটি আঁশযুক্ত খাবার। খেজুরের মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
খেজুরের খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। খেজুর খেতে শুধু সুস্বাদু ফল না আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খেজুরের উপকারিতা রয়েছে অনেক। পুষ্টিবিদরা খেজুরকে স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি সুপারফুট হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যারা চিনি খেতে কিংবা মিষ্টি খেতে চান না তাদের জন্য খেজুর একটি পুষ্টিকর বিকল্প মিষ্টি। বিশ্বব্যাপী খেজুরে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির আছে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ মত স্বাস্থ্যকর সব প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর উপাদান। চলুন তাহলে জেনে নেই খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে।
পুষ্টিগুণে ভরপুর
ভিটামিন, মিনারেল, ভিটামিন বি, সিন্থেটিক অ্যাসিড এবং ফোলেট রয়েছে খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে। এছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে খেজুরের মধ্যে। তাছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাগানিজ এবং আয়রনের মত গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান। এই উপাদানগুলো যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এ উপাদানগুলোর কার্যকারিতা অনেক।
শক্তি বৃদ্ধি
খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে যেমন গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। খেজুরের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর মানুষের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য হতে পারে।
পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং খেজুর একটি আঁশযুক্ত খাবার। প্রতিদিন খেজুর খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি হবে এবং খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য মত কঠিন সমস্যা থেকেও মুক্তি দিবে।
হৃদরোগের ঝুকি কমায়
খেজুরের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
রক্তের স্বল্পতা বাড়ায়
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর খেলে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যারা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য একমাত্র সমাধান হতে পারে খেজুর। আপনি যদি প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের শিরার ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালিত হয়।
হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান। আর এ উপাদানগুলো হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং দাঁতকে মজবুত করতে ও দাঁতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
খেজুরের মধ্যে ভিটামিন বি থাকার কারণে মস্তিষ্ক কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায় এবং যারা অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন রাতে ভালো করে ঘুম হয় না তারা প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে খেজুর খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
আমরা উপরে আলোচনায় জেনেছি খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি তবুও এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে আমাদের সাহায্য করে থাকে। খেজুরের মধ্যে থাকা ফাইবার খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা কমায় এছাড়া খেজুরে রয়েছে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম তাই আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা চিন্তা করেন তবে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ত্বকের স্বাস্থ্য
খেজুরের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি। আর এই উপাদান গুলো আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বক সজীবতা উজ্জ্বল ও কোমল হবে। খেজুরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। যারা বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের জন্য খেজুর একটি উপকারী খাবার। এছাড়া খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি লিভারের মধ্যে থাকা টনিক দূর করে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খেজুর একটি আদর্শ খাবার হতে পারে।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা
খেজুরের মধ্যে থাকা আয়রন এবং ভিটামিন বি চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া কমায় এবং নিয়মিত খেজুর খেলে চুল বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
চোখের সমস্যা
শুধু চুলের যত্নে না চোখের সমস্যা তেও খেজুর উপকার করে থাকে। খেজুরের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন রাতকানা রোগ, চোখের শুষ্কতা এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং চোখের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় উপকারিতা
খেজুরের এত উপকারীতার কথা শুনে হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও কোন অংশে কম নয়। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে কিছু এক্সট্রা এনার্জির দরকার হয়। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আপনি যদি খেজুর খান তবে মা এবং শিশুর দুজনেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে। তাছাড়া খেজুরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শিশুর ত্বক ভালো রাখবে এবং পটাশিয়াম শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করবে। খেজুরে পর্যন্ত পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে আপনার গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য মত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। খেজুরের মধ্যে যে পুষ্টিগুণ রয়েছে তা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য উপকারী। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খেজুর হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ আরো একাধিক সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন পুরুষের কিছু বিশেষ সমস্যা সমাধান হয় খেজুর খেলে।
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খেজুর খেলে প্রাণশক্তি বাড়ে এবং অদম্য মনোবল তৈরি হয়। প্রতিদিন খেজুর খেলে পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শুক্রাণুর সংখ্যাও বাড়ে। বর্তমানে কাজের চাপ, মানসিক চাপ সবকিছুর প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের ওপর। আর বিশেষ করে বেশি প্রভাব পড়ে যৌনশক্তির ওপর। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পুরুষ ও নারীরাই যৌনশক্তির অভাবে ভোগেন।
তাদের মধ্যে যৌন মিলন করার ইচ্ছাটাই চলে যায়। আর এই সমস্যা সমাধান নিতে প্রতিদিন খেজুর খান। খেজুর প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখলে যাদের যৌনসম্পর্কের সময় খুব দ্রুত ক্লান্ত অনুভব হয় তাদের জন্য ওষুধের মত কাজ করবে। তাছাড়া খেজুরের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিনের মধ্যে উপাদান।
আর এসব উপাদান একজন পুরুষের শরীরে যৌন পুষ্টি জোগাতে জাদুর মত কাজ করে। তাই আপনি যদি আপনার যৌনশক্তি আগের মত বৃদ্ধি করতে চান কিংবা আগের চেয়ে আরো বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাওয়া উচিত একজন সুস্থ মানুষের জন্য এ বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে খেজুর খাওয়ার আগে জেনে নেওয়া উচিত। খেজুরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তবে আপনি যদি প্রতিদিন কয়টি খেজুর খেলে আপনার শরীরে উপকার হবে বেশি সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন তবে খেজুরের উপকারিতা সঠিকভাবে পাবেন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা একজন সুস্থ মানুষ দিনে চার-পাঁচটি খেজুর খেতে পারবেন।
সকালে ব্যায়াম করার আগে কিংবা কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের আগে আপনি যদি ছয়-সাতটা খেজুর খেতে পারেন তবে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া সকাল কিংবা বিকালের নাস্তাতেও আপনি খেজুর রাখতে পারেন এতে উপকার পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি যদি রাতে এক গ্লাস দুধের সাথে ৩-৪ টি খেজুর ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে সাত দিনের ভেতরেই আপনি উপকার পাবেন এবং আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন উপলব্ধি করবেন।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
সারা পৃথিবীর পুষ্টিবিদরা খেজুরের গুনাগুন নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পুষ্টিবিদেরা মনে করেন খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাগানিজ, আয়রন ও ভিটামিন বি৬। তাছাড়া একাধিক জরুরী খনিজ রয়েছে খেজুরের মধ্যে। তাই প্রতিদিন খেজুর খেলে শরীরে স্বাস্থ্য উন্নতি হয়ে থাকে। তবে আরো বেশি উপকার পেতে চাইলে খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
রোজ রাতের বেলা ঘুমাতে যাবার আগে তিন-চারটে খেজুর নরমাল ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে সকালে নাস্তা করার পর প্রতিদিন খেতে হবে। খেজুর ভিজিয়ে খেলে উপকার মিলবে চট জলদি এবং আপনি বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে এড়িয়ে চলতে পারবেন। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি এবং ভেজানো খেজুর খেতে পারেন তবে আপনার পেট ও পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
কারণ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আপনার পেট পরিষ্কার রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং মলকে নরম করতে সহায়তা করে। তাছাড়া আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে, মনকে সতেজ রাখতে, খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই অবশ্যই প্রতিদিন রাতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে নাস্তার পরে খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে শুকনো খেজুরের মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে তা আগে জেনে নেওয়া যাক। শুকনো খেজুর সাময়িকভাবে আমাদের শরীর ও মন ভালো রাখতে এবং শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া বিপাক হার উন্নতি করতেও শুকনো খেজুর এর কোন জুড়ি নেই। গ্লুকোজ এবং সুক্রোজের মত প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে এই শুকনো খেজুরের মধ্যে। আপনি যদি প্রতিদিন শুকনো খেজুর খেয়ে দিন শুরু করেন তবে আপনার দিনটি হবে ক্লান্তিমুক্ত সতেজ ও চনমনে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই তিনটা শুকনো খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে নাস্তা করার পরে শুকনো খেজুর ভেজানো পানি এবং খেজুরগুলো খেয়ে নিন। এভাবে আপনি যদি শুকনো খেজুর ভিজিয়ে খেতে পারেন তবে শুকনো খেজুরের ভিতর থাকা উপাদানগুলো আপনার শরীরে দ্রুত এনার্জি বৃদ্ধি করবে, সারাদিন শরীরের ক্লান্তি দূর করবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা যেমন অনেক রয়েছে তেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুর খাওয়ার অপকারিতা রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলেন প্রয়োজনের তুলনায় কোন খাবারে বেশি খাওয়া ভালো নয়। আপনি যদি প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খান তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার শরীরের জন্য ভালো না এতে আপনার উপকারের চাইতে অপকারী হবে বেশি।
তাছাড়া খেজুর অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা হয় আর সংরক্ষণ করার জন্য খেজুরের মধ্যে দেওয়া হয় সালফেট নামক রাসায়নিক একটি উপাদান। অনেক সময় এই উপাদান গুলো আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি কারণ হতে পারে। এছাড়া খেজুর কম ক্যালরিযুক্ত খাবার হলেও খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা অবশ্যই অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন। নয়তো আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
১. গরম দুধের সাথে খেজুর খেলে কি হয় ?
গরম দুধের সাথে খেজুর খেলে মিলতে পারে অনেক উপকার আপনার শরীরে। দুধ একটি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য আর খেজুর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। তাই দুধ আর খেজুর যদি একসাথে মিলিয়ে খাওয়া যায় তাহলে পুষ্টিগুণ আরো অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাছাড়া দুধ ও খেজুর একসাথে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি একটি উপকারী খাদ্য হতে পারে।
২. খেজুর খেলে কি মোটা হয় ?
খেজুর খেলে কি মোটা হয় এটার যথার্থ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে হ্যাঁ আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুর খান তবে অবশ্যই মোটা হবেন। খেজুরের মধ্যে রয়েছে ফাইবার, ক্যালরি, ভিটামিন এবং প্রাকৃতিক চিনি। যেহেতু প্রাকৃতিক চিনি এবং ক্যালরির পরিমাণ খেজুরে বেশি থাকে তাই অতিরিক্ত খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার খাদতালিকায় ক্যালরির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত হয়ে যায় তবে অবশ্যই খেজুর খেলে আপনার স্বাস্থ্য মোটা হতে পারে।
৩. খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় ?
সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে খেজুরের মধ্যে থাকা ফাইবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, মস্তিষ্ক সতেজ রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড় মজবুত করে, শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় করে, চোখের সমস্যা দূর করে এবং সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
৪.অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয় ?
খেজুর খুব উপকারী ফল কিন্তু অতিরিক্ত খেলে হিতের বিপরীত হতে পারে। প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত খেজুর খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. খেজুর খাওয়ার নিয়ম ?
খেজুর একটি পুষ্টিকর উপকারী খাদ্য। তবে আপনি যদি খেজুর নিয়ম মেনে খান তবে এর উপকার আরো অনেকাংশেই বেড়ে যায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই তিনটা খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে নাস্তা করার পরে খেজুরের পানিও ভেজানো খেজুর গুলো খেয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে সাত দিন খান নিজেই এর উপকার বুঝতে পারবেন।
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
রাতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। আপনি যদি রাতে নিয়মিত ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খান তবে আপনার শরীরের বেশি শক্তি বৃদ্ধি পায়। খেজুর শরীরের জয়েন্টের ব্যথা কমায় ও রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদরা বলেন যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তারা যদি রাতে খেজুর খান তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বিশেষ করে পুরুষদের রাতে অবশ্যই অন্তত দুইটা খেজুর খাওয়া উচিত। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে ফলে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা অনেকাংশই কমে যায় এবং চাহিদা ও কমে যায়। আর খেজুর পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পুরুষদের যদি শুক্রানুর সমস্যা থাকে তবে নিয়মিত খেজুর খেলে শ্তক্রানু বৃদ্ধি পায়।
রাতে খেজুর খেলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের প্রেসারের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন রাতে খেজুর খেতে পারেন। এতে রাতে ভালো ঘুম হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। এছাড়া রাতে খেজুর খেলে আপনার শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি পায়।
আমাদের শেষ কথা
খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। তাই প্রতিদিন আমাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মনে করে খেজুর রাখা উচিত। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি আপনার এবং আপনার বাচ্চার শরীরের যথেষ্ট পুষ্টি পেতে চান তবে অবশ্যই নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এছাড়া ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ দমন করতেও খেজুরের কোন জুড়ি নেই।
তাই প্রত্যেকের উচিত খেজুর দিয়ে বানানো বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করে খাওয়া। আমাদের খুরমা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত পোস্টটি আপনার কেমন লেগেছে কিংবা এ পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা আপনাদের প্রশ্নের অপেক্ষায় রইলাম। আর স্বাস্থ্য বিষয়ক পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url