পুটি মাছের ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা
পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা আপনাকে জানানোর জন্য আজকের আর্টিকেলটি লিখতে বসেছি। আপনি যদি পুটি মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটির সঙ্গেই থাকুন।
পুটি মাছ আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। তাই পুটি মাছে কি এলার্জি আছে, পুঁটি মাছের পুষ্টিগুণ, পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য, পুটি মাছ চাষ পদ্ধতি, পুটি মাছ খেলে কি হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। আপনার যদি পুটি মাছ অনেক বেশি প্রিয় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন পুটি মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য।
পেজ সূচিপএ
পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমরা আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। পুটি মাছ একটি ছোট আকৃতির মাছ কিন্তু আপনি যদি পুটি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন তাহলে অবাক হবেন। পুটি মাছ একটি ছোট আকৃতির মাছ কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর।
পুটি মাছের মধ্যে এমন কিছু পুষ্টিগু উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত প্রতি মাছ খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। পুটি মাছ প্রাকৃতিক দিক থেকে ছোট হলেও কার্যক্ষমতা অনেক বেশি।
আরো পড়ুন: টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের আর্টিকেলে আমরা পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাছাড়া পুটি মাছ খেলে এলার্জি হয় কিনা এবং পুটি মাছে কি কি পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে ও পুঁটি মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের জানাবো।
পুটি মাছ খুব কম দামে পাওয়া যায় কিন্তু কোটি বছর মধ্যে জাদুকরি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুব জরুরী। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত পুঁটি মাছ খাওয়া উপকার। পুটি মাছের উপকারিতা অনেক বেশি উপকারিতা খুবই কম। চলুন তাহলে পুঁটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পুটি মাছের উপকারিতা
- পুটি মাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি। তাই আপনি যদি প্রতিদিন পুটি মাছ খান তাহলে পুঁটি মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ ও বি আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।
- পুটি মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তাই পুটি মাছ খেলে আমাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়।
- পুটি মাছ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। তাই আপনি যদি প্রতিদিন পুটি মাছ খান তাহলে আপনার শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের উপকার হয় ও ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- পুটি মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকার কারণে প্রতিদিন পুটি মাছ খেলে আমাদের পেশির গঠন সঠিকভাবে হয় ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সহায়তা করে।
- পুটি মাছ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আপনার শরীর যদি অনেক বেশি দুর্বল ও ক্লান্ত মনে হয় তাহলে আপনি প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় পুটি মাছ রাখতে পারেন।
- পুটি মাছ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও খুব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি প্রতিদিন পুটি মাছ খায় তাহলে পুটি মাছের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- পুটি মাছ দ্রুত শক্তি যোগাতে সহায়তা করে। আপনি যদি অনেক বেশি শারীরিক ব্যায়াম কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাহলে দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য পুটি মাছ খেতে পারেন।
- পুটি মাছ মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে পুটি মাছ খুবই উপকারী।
- পুটি মাছের মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোষগুলো দমন করে থাকে। আপনি যদি মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুটি মাছ রাখতে পারেন।
- পুটি মাছ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে। পুঁটি মাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং নয়টি অ্যামিনো অ্যাসিড। আর এই উপাদানগুলো আমাদের শিরার ভেতরে রক্ত চলাচল সচল করে এবং হৃদরোগের ঝুকি কমায়।
- পুটি মাছের মধ্যে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে এবং আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবেন তাহলে পুটি মাছ খেতে পারেন। পুটি মাছের মধ্যে কম ক্যালোরি থাকার কারণে পুটি মাছ শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- পুটি মাছ আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আপনি যদি উচ্চব্লাড প্রেসারের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য পুটি মাছ খেতে পারেন।
- পুটি মাছ দাঁতের জন্য খুব উপকারী। পুটি মাছ খেলে দাঁতের গোড়া মজবুত হয় এবং দাঁতের গোড়ায় সঠিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ হয়। বাচ্চাদের দাঁতের গোড়া মজবুত করার জন্য প্রতিদিন পুটি মাছ খাওয়াতে পারেন।
- পুটি মাছ সহজে হজম হয় তাই পাচনতন্ত্রের জন্য খুব উপকারী।
- পুটি মাছ খেলে আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্টোকের ঝুঁকি কমে।
- পুটি মাছ আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। আপনি যদি রক্তশূন্যতার সমস্যায় ভুগেন তাহলে পুটি মাছ খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায়।
- পুটি মাছ চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
- পুটি মাছ মানসিক চাপ কমায় এবং মন সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
পুটি মাছের অপকারিতা
পুটি মাছের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন অপকারিতা কিছু রয়েছে। আমরা জানি যে কোন জিনিসের উপকারের পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে। তাই অবশ্যই উপকারিতা জানার পাশাপাশি অপকারিতা জানা জরুরী। পুটি মাছ খেলে আমাদের শরীরে খুব কম পরিমাণে অপকারিতা হয়। চলুন তাহলে জেনে নেই পুটি মাছ খেলে আমাদের শরীরে কি কি অপকারিতা হতে পারে।
- পুটি মাছের উপকারিতা অনেক বেশি তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে পুটি মাছ খান তাহলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
- তাছাড়া অতিরিক্ত মসলা দিয়ে পুঁটি মাছ রান্না করলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
- কারো কারো ক্ষেত্রে পুটি মাছ খাওয়ার পরে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত পুটি মাছ খেলে আমাদের হজম শক্তি কমে যায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়।
- সঠিক নিয়মে পুটি মাছ রান্না না করলে পুঁটি মাছের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পুটি মাছ খাওয়ার আগে অবশ্যই পুটি মাছ খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রান্না করা উচিত। তাছাড়া রান্না করার সময় কম মসলা দিয়ে এবং অনেক সময় পর্যন্ত সিদ্ধ করে রান্না করা জরুরী। বেশিক্ষণ ধরে রান্না করলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমে যায়। তাছাড়া আপনার যদি অ্যালার্জি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে তাহলে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণ। এতে আপনার এলার্জি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে।
পুটি মাছে কি এলার্জি আছে
পুটি মাছে এলার্জি আছে এমন ধারণা অনেকেই করে থাকে। পুঁটি মাছ খাওয়ার ফলে আমাদের সাধারণভাবে কোন এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় না তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পুটি মাছ খেলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। পুটি মাছ কিংবা যে কোন অন্য মাছের প্রোটিনের প্রতি যদি কোন মানুষের অতিসংবিধানশীলতা থাকে তাহলে এসব মাছ খাওয়ার পরে এলার্জির সমস্যা হয়।
একেকজনের শারীরিক সমস্যা এক এক রকম হয়ে থাকে তাই সব খাবারে সবার এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয় না। কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের পুটি মাছ খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয় আবার কিছু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের পুটি মাছ খাওয়ার ফলে এলার্জির কোন প্রতিক্রিয়া হয় না।
পুটি মাছে আপনার এলার্জি সমস্যা হবে কিনা এ বিষয়টা জানার জন্য আপনাকে প্রথমে অল্প পরিমাণে পুটি মাছ খেয়ে দেখতে হবে। যদি পুটি মাছ খাওয়ার পরে আপনার শরীরে চুলকানি,ফুসকুড়ি, লালচে ভাব, নাক দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে পুটি মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আর যদি পুটি মাছ খাওয়ার পরে আপনার শরীরে কোন লক্ষণ প্রকাশ না পাই তাহলে পুটি মাছ আপনার জন্য নিরাপদ। এছাড়া যাদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা পুটি মাছ খেলে এলার্জির ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই পুটি মাছ খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আশা করি আপনি পুটি মাছের উপকারিতা জানার সাথে সাথে পুটি মাছে কি এলার্জি আছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
পুটি মাছের পুষ্টিগুণ
পুটি মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি। আকারে ছোট হলেও পুঁটি মাছে পুষ্টি কম এটা ভাবা কখনোই ঠিক নয়। আকারে ছোট মাছগুলো দামে কম হলেও অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। পুটি মাছ আকারে ছোট হতে পারে কিন্তু পুষ্টিগুণ অনেক বড়। চলুন তাহলে ১০০ গ্রাম পুটি মাছের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে সে সম্পর্কে আপনাদের জানাই।
প্রতি ১০০ গ্রাম পুটি মাছের মধ্যে রয়েছে -
- প্রোটিন = ১৯/২০ গ্রাম।
- চর্বি = ২/৩ গ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট = ০।
- ক্যালসিয়াম = ১৫০/২০০ মিলিগ্রাম।
- ফসফরাস = ১৮০/১৯০ মিলিগ্রাম।
- লোহা = ১/৩ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন এ = ১০/৪০ মাইক্রোগ্রাম।
- ভিটামিন ডি = স্বল্প পরিমাণে।
- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড = স্বল্প পরিমাণে।
পুটি মাছের মধ্যে যেসব পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে সেগুলো আমাদের কোষ গঠন করতে এবং কোষের মেরামত করতে সহায়তা করে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্ত স্বল্পতা কমাতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ খুব সহজে নিরাময় করে। আশা করি পুটি মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা আপনাকে যথাযথভাবে জানাতে পেরেছি।
পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য
পুটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনার যদি ভালোভাবে জানা থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই এই মাছটি দেখলে চিনতে পারবেন। পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা আর্টিকেলের উপরের অংশে বিস্তারিত আপনাদের জানিয়েছি এখন আমরা পুটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাবো।
পুটি মাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এই মাছটিকে অন্যান্য মাছের থেকে আলাদা করে। চলুন তাহলে আর দেরি না করে পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাই।
- পুন্টিয়াস সফোরে (Puntius sophore) পুটি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম।
- পুটি মাছ সাধারণভাবে আকারে ছোট হয়ে থাকে এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- পুটি মাছের পেছনের অংশটুকু শুরু হয়ে থাকে এবং রুপালি বর্ণের হয়ে থাকে।
- পুটি মাছের গায়ের রং রুপালি, সাদা, হালকা বাদামি কিংবা ধূসর রং এর হয়ে থাকে তাই এই মাছ স্বচ্ছ পানির ভেতরে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে।
- পুটি মাছের ওপরের অংশটি উজ্জ্বল ছাই বর্ণের ও সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে এবং নিচের অংশ সাধারণভাবে সাদা বর্ণের হয়।
- পুটি মাছ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং খুব কম সময়ের মধ্যে পুঁটি মাছ খাবার উপযোগী হয়ে থাকে।
- পুটি মাছ খেতে খুব নরম ও সুস্বাদু হয়ে থাকে।
- পুটি মাছের ত্বক খুব মসৃন ও পিচ্ছিল হয়। তাই খুব সহজে কেউ পুটি মাছ শিকার করতে পারে না।
- পুটি মাছ সাধারণভাবে ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ, বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, প্ল্যান্কটন এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র জল প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। পুটি মাছ সাধারণভাবে বছরে দুইবার ডিম পাড়ে তবে বর্ষাকালে পুটি মাছ অনেক বেশি প্রজনন ক্ষমতা রাখে।
- ডিম পাড়ার সময় পুরুষ পুটি মাছের দেহের উভয় পাশে লাল রঙের গাঢ় দাগ লক্ষ্য করা যায়।
- পুটি মাছের দেহে খুব সুন্দর দুইটি কালো ফোঁটা থাকে। একটি ফোটার আকার ছোট এবং একটি ফোটার আকার বড় হয়। কানকোর পেছনদিকে ছোট ফোটাটি থাকে এবং পায়ু পাখনার ওপরের দিকে বড় ফোটাটি থাকে।
- পুটি মাছ বেশিরভাগ জলাশয়ের খাবার খেয়েই জীবন ধারণ করে তাই এটি ছোট বড় যে কোন জলাশয় খুব সহজে চাষ করা যায়। এছাড়া পুটি মাছ যে কোন প্রজাতির মাছের সঙ্গে চাষ করা যায়। আপনি যেকোনো প্রজাতির মাছের সাথে একসাথে মিশ্র চাষ করলেও পুটি মাছের উৎপাদন ভালো হয়ে থাকে।
- ছোট সব মাছের সাথে তুলনা করতে গেলে উপকারীর দিক থেকে পুঁটি মাছ প্রথম সারিতে স্থান পায়। পুটি মাছের মধ্যে প্রচুর রয়েছে আমিষ ক্যালসিয়াম এবং প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণ। তাছাড়া পুটি মাছের মধ্যে প্রচুর রয়েছে আয়রন ও ভিটামিন।
উপরে আমরা পুটি মাছের বৈশিষ্ট্য গুলো খুব সহজ ভাবে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি।আশা করি আপনি পুটি মাছের বৈশিষ্ট্য খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং এখন খুব সহজেই পুটি মাছ দেখলে চিনতে পারবেন।
পুঁটি মাছ চাষ পদ্ধতি
পুটি মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। আমরা আর্টিকেলের এই অংশে পুটি মাছের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। পুটি মাছ আকারে ছোট হলেও খুব উপকারী একটি মাছ।
পুঁটি মাছ বিভিন্ন ধরনের খাল বিল ও জলাশয়ে পাওয়া যায়। পুটি মাছ বাংলাদেশ সহ নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, মায়ানমার এবং চীন দেশেও ব্যাপক আকারে চাষ করা হয়। পুটি মাছ একটি মিঠা পানির মাছ।
তাই আমরা যে কোন নদী নালা, খাল বিল, পুকুর, জলাভূমি, ধানক্ষেত কিংবা যেকোনো ছোট জলাশয় এটি খুব সহজে চাষ করতে পারি। পুটি মাছ সাধারণভাবে জলাশয়ের খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে তাই আপনি খুব সহজেই বাড়ির আশেপাশে ছোট যেন কোন পুকুর কিংবা জলাশয়ে চাষ করতে পারেন। তাছাড়া পুটি মাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পুটি মাছ যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খুব সহজেই বেঁচে থাকতে পারে।
আরো পড়ুন: কোন কোন মাছে এলার্জি আছে
পুটি মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি তাই আপনি পুটি মাছ চাষ করেও ব্যাপক লাভ করতে পারেন। তাছাড়া পুটি মাছ চাষ করতে অনেক বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না এবং খুব কম পরিশ্রম করেই লাভবান হওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের পুটি মাছের চাহিদা অনেক বেশি। পুটি মাছের চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে এখন সবাই পুটি মাছ প্রায় সারা বছরই চাষাবাদ করছে।
পুটি মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে আর আমরা পুটি মাছের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের আগেই জানিয়েছি এখন আমরা পুটি মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। পুটি মাছ চাষ করে আপনি যদি লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরী। যেমন-
- উপযুক্ত পুকুর বাছাই।
- উপযুক্ত সময়।
- পোনা ছাড়ার সঠিক নিয়ম।
- সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি।
- সঠিক খাবার প্রয়োগ।
- সঠিক সার প্রয়োগ।
- এবং সর্বশেষে সঠিক পরিচর্যা।
- উপযুক্ত পুকুর বাছাই: পুটি মাছ যদি আপনি সঠিকভাবে চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে পুটি মাছ চাষ করার জন্য উপযুক্ত পুকুর বাছাই করতে হবে। পুটি মাছ সাধারণভাবে মিঠা পানির মাছ বলে খাল বিল, পুকুর ও জলাশয় ভালো পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তাই সর্ব প্রথম আপনাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে যে পুকুরের পাড় শক্ত এবং উঁচু ও বন্যার সময় ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তাছাড়া আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । পুকুর নির্বাচন করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পুকুরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো থাকে এবং পুকুরের আশপাশ আগাছা মুক্ত থাকে। পুকুরের আশেপাশে আগাছা মুক্ত থাকলে খুব সহজে আলো বাতাস পুকুরে প্রবেশ করতে পারবে।
- উপযুক্ত সময়: পুটি মাছ বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। তবে আপনি যদি বর্ষাকালে পুটি মাছ চাষ করেন তাহলে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন কারণ বর্ষাকালে পুটি মাছ প্রচুর পরিমাণে ডিম দেয়। পুটি মাছ সাধারণভাবে এপ্রিল থেকে মে মাসের ভেতরে বেশি ডিম দিয়ে থাকে তাই বেশিরভাগ চাষীরাই এই সময়টাকে পুটি মাছ চাষ করার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন।
- পোনা ছাড়া সঠিক নিয়ম: পুটি মাছ চাষ করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক নিয়মে পোনা ছাড়া। আপনি যদি পুটি মাছ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই ভালো জায়গা থেকে সবল পোনা নির্বাচন করতে হবে। এমন পোনা নির্বাচন করা যাবে না যে পোনাগুলো খুবই দুর্বল এবং খুব সহজেই মারা যায়। আপনার এলাকার আশেপাশে ভালো নার্সারি কিংবা বড় কোন পুকুর থেকে পুটি মাছের পোনা সংগ্রহ করা উচিত। পোনা সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরী যে পোনাগুলো যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখার জরুরী যে পুকুরে কিংবা জলাশয়ে পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময় হলো সকাল কিংবা বিকাল বেলা। কারণ সকাল ও বিকেল বেলা সূর্যের তাপমাত্রা কম থাকে। ফলে অতিরিক্ত গরমে পোনা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পোনা ছাড়ার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে পোনা পরিবহন করার ব্যাগে যেন পর্যন্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ থাকে। পোনা ছাড়ার সময় খুব অল্প অল্প করে পানিতে ফেলতে হবে যাতে পোনাগুলো কোন চোট না পাই। আপনি যদি চান তাহলে ব্যাগের ভেতরে প্রথমে পানি দিয়ে আস্তে আস্তে পুকুরে পোনা গুলো ছাড়তে পারেন।
- সঠিক চাষাবাদ পদ্ধতি: পুটি মাছ সাধারণভাবে বছরে দুইবার করে ডিম দেয় তাই পোনা গুলো সঠিক নিয়মে কিভাবে চাষাবাদ করা যায় সে সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে হবে। খুব ভালোভাবে আগে জানতে হবে ছোট পোনা গুলোকে কিভাবে রাখলে খুব কম মারা যাবে এবং খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
- সঠিক খাবার প্রয়োগ: পুটি মাছ পুকুর কিংবা জলাশয়ের পোকামাকড়, জলজ উদ্ভিদ কিংবা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে আপনি যদি পুটি মাছ খুব দ্রুত বড় করতে চান তাহলে নিয়মিত খাবার দিতে হবে। পুঁটি মাছ এমন একটি মাছ যা সব ধরনের খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে তাই চাষ করার ক্ষেত্রে পুটি মাছকে আলাদা করে খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পুটি মাছ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন শৈবাল, কেঁচো বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট জলজ পোকামাকড় ইত্যাদি খায়। তাছাড়া আপনি পুটি মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ইউরিয়া, টিএসপি গোবর ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ভাসমান বা ডুবন্ত ফিড ইত্যাদি খাবার দিতে পারেন।
- সঠিক সার প্রয়োগ: পুটি মাছ পুকুরের বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়েই বেঁচে থাকে তবে আপনি যদি পুটি মাছ থেকে ভালো ফলন পেতে চান তাহলে অবশ্যই কিছু ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার মাঝেমধ্যে দেওয়া জরুরী। আপনি যদি মাঝেমধ্যে সার প্রয়োগ করেন তাহলে পানির গুনাগুন মান ঠিক থাকে এবং মাছ অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- সঠিক পরিচর্যা: আপনি যদি পুটি মাছ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই সঠিক পরিচর্যা করা প্রয়োজন। পুটি মাছ যেহেতু ছোট আকৃতির মাছ তাই পুটি মাছ চাষ করার সময় আপনার পুকুর থেকে বড় রাক্ষসের মাছগুলো দূর করতে হবে। যেমন শোল মাছ, বোয়াল মাছ, মাগুর মাছ, গজার, টাকি মাছ। এই মাছগুলোর সাথে পুটি মাছ চাষ করলে এই মাছগুলো পুটি মাছের পোনা খুব সহজে খেয়ে ফেলবে। পুটি মাছ ছাড়ার আগে পুকুরে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পুকুর পরিষ্কার করতে হবে। পুকুরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং মাছগুলোকে প্রতিদিন সঠিক সময় খেতে দিতে হবে। বৃষ্টি কিংবা মেঘলা দিনে মাছগুলোকে কম পরিমাণে খাবার দিতে হবে।
আশা করি আপনি পুটি মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এতক্ষণে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। যদি আপনি পুটি মাছ চাষ করার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই উপরের পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে খুব সহজেই পুটি মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
পুটি মাছের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং খুব কম খাবারে অতি দ্রুত বড় হয় তাই আপনি যদি একটু যত্ন নেন তাহলে খুব সহজেই অধিক সংখ্যক পুটি মাছ চাষ করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
মন্তব্য - পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক, আমরা আর্টিকেলের একেবারেই শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আপনি যদি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে এতক্ষণে পুটি মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাছাড়া পুটি মাছে কি এলার্জি আছে এবং পুটি মাছের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ উপাদান সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন। পুটি মাছ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে অবশ্যই পুটি মাছ নিয়ম অনুযায়ী এবং সঠিক পরিমাণে খাওয়া জরুরী।
আরো পড়ুন: রুই মাছে কি এলার্জি আছে
অতিরিক্ত পরিমাণে পুটি মাছ খেলে উপকারের চাইতে ক্ষতি হবে বেশি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রিয়জনদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর আপনার যদি মূল্যবান কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url