চেরি ফলের ২২টি উপকারিতা ও অপকারিতা
চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কম-বেশি সকলের জানা থাকলেও গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা রয়েছে। চেরি ফল দেখতে শুধু লোভনীয় না বরং চেরি ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন পুষ্টি গুণে ভরপুর।
আজকে আমরা আর্টিকেলে চেরি ফলের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা দিক আলোচনা করার সাথে সাথে চেরি ফল চেনার সহজ কিছু উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। তাই অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে এখনই পড়া শুরু করুন।
পেজ সূচিপএ
চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই রয়েছে। চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়া চেরি ফল খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম। প্রতিদিন নিয়ম করে চেরি ফল খেলে শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পায়।
আরো পড়ুন: শুটকি মাছে কি এলার্জি আছে
তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে উপকারের পাশাপাশি ক্ষতিও হবে বেশি। কারণ চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। আমাদের শরীরে যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে চেরি ফলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই চেরি ফলের উপকারিতা জানার পাশাপাশি চেরি ফলের অপকারিতার বিষয়েও বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেই চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
চেরি ফলের উপকারিতা
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ চেরি ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরকে ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যথা দূর করেঃ চেরি শরীলের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। আপনি যদি আর্থাইটিসের ব্যথায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত চেরি খেতে পারেন। কারণ চেরির মধ্যে রয়েছে ফেনোলিক যৌগ্য যা অ্যান্থোসায়ানিন অ্যাথাইটিসহ শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ ও ব্যথা খুব সহজে কমাতে সহায়তা করে।
- অনিদ্রা দূর করেঃ চেরি ফল অনিদ্রা দূর করতে সহায়তা করে। কারণ চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে মেলাটোনিন উপাদান। আর মেলাটোনিন উপাদান আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তাই আপনি যদি অনিদ্রার সমস্যায় ভুগেন কিংবা রাতে ভালো ঘুম না হয় তাহলে চেরি ফল খেতে পারেন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ চেরি ফল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই কার্যকরী। চেরি ফলের মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম পরিমাণে থাকে। ফলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে এবং শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমেঃ চেরি ফল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে জাদুর মত কাজ করে। আপনি যদি হৃদরোগের সমস্যায় ভুগেন তাহলে আজ থেকেই নিয়ম করে চেরি ফল খাওয়া শুরু করুন। এতে করে আপনার হৃদরোগের সমস্যা দূর হওয়ার সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
- কোলেস্টেরল কমায়ঃ চেরি ফল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি রক্তে কোলেস্টোরলের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত চেরি ফল খেতে পারেন। নিয়মিত চেরি ফল খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো কোলে মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ চেরি ফল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুবেন তাহলে অবশ্যই চেরি ফল রাখুন। এতে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ চেরি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে কারণ চেরির মধ্যে রয়েছে পর্যায়ে পরিমাণে ভিটামিন এবং অন্যান্য মিনারেলস উপাদান। আর এই উপাদান গুলো আমাদের শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
- পেশীর ব্যথা কমায়ঃ যারা অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন তারা প্রতিদিন এক গ্লাস চেরির শরবত খেতে পারেন। শারীরিক পরিশ্রমের পরে কিংবা কঠিন ব্যায়ামের পরে যদি আপনি এক গ্লাস চেরি শরবত খান তাহলে পেশির ভেতরে রক্ত চলাচল সচল হয় এবং বেশির ব্যথা কমে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ঃ যারা দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন চেরি খেতে পারেন। চেরির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। আর ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে।
- প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করেঃ চেরি প্রসাবের ইনফেকশন দূর করতেও খুব কার্যকরী। চেরির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের মূত্রনালী থেকে খারাপ ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয় এবং প্রসাবের ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ত্বক ভালো রাখেঃ চেরি ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। চেরির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। তাই আপনি যদি প্রতিদিন চেরি খান তাহলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও বয়সের ছাপ দূর হয়।
- মানসিক চাপ কমেঃ যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভুগছেন তারা প্রতিদিন চেরি খেতে পারেন। চেরি মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে কারণ চেরির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই উপাদান দুটো আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ দূর করে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ চেরির মধ্যে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল নামক এক ধরনের উপাদান। আর এই উপাদানটি আমাদের শরীরকে মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। আপনি যদি ক্যান্সারের সমস্যায় ভুগেন কিংবা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন চেরি খেতে পারেন।
- হাড় মজবুত করেঃ চেরির মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। চেরি হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়ের পেশীগুলো সচল রাখে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ চেরি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। আপনি যদি খুব সহজে কোন কথা ভুলে যান তাহলে প্রতিদিন নিয়ম করে চেরি খেতে পারেন। এতে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়বে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
- পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ চেরি ফল পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আমাদের হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- চুল মজবুত হয়ঃ চেরি ফল চুল মজবুত করতেও সহায়তা করে। চুল পড়া কমায় এবং চুলের ত্বক ভালো রাখে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ চেরি ফল ওজন কমাতে সহায়তা করে। চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং আঁশ তাই আপনি যদি ওজন কমানোর কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চেরি রাখতে পারেন। চেরি ফল আপনার পেট দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভরা রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- ক্ষত সারাতে সহায়তা করেঃ চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। তাই আপনার শরীরের যদি কোথাও কেটে যায় তাহলে দ্রুত সারানোর জন্য আপনি চেরি ফল খেতে পারেন।
- লিভার ভালো রাখেঃ চেরি ফল লিভার ভালো রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন চেরি ফল খেলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং লিভারের ভেতর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন গুলো খুব সহজে বাইরে বের হয়ে যায়।
- কিডনি ভালো রাখেঃ চেরির মধ্যে রয়েছে কম সোডিয়াম এবং বেশি পটাশিয়াম। তাই আপনি যদি প্রতিদিন চেরি খান তাহলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা
চেরি ফলের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে কোন খাবারই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না। চলুন তাহলে জেনে নেই অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি হতে পারে।
- পেট ব্যথাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে। চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার তাই আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে আপনার হজমের সমস্যা, পেটে গ্যাস, পেট ফোলা ভাব এমনকি ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- কিডনিতে পাথরঃ অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তারা অতিরিক্ত চেরি ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে অক্সালেট নামক উপাদান। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে অক্সালেট আপনার কিডনিতে পাথরের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
- দাঁতের ক্ষয়ঃ অতিরিক্ত পরিমাণে কিংবা দীর্ঘদিন যাবত চেরি ফল খেলে চেরির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা এবং এসিড আমাদের দাঁতের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
- এলার্জির সমস্যাঃ আপনি যদি এলার্জির সমস্যায় ভুগেন তাহলে অবশ্যই চেরি ফল খাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। অনেকের শরীরের চেরি ফল খাওয়ার পরে এলার্জি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, গলা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিস বাড়ায়ঃ চেরি ফল খেলে যেমন আমাদের ডায়াবেটিস কমে তেমন অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে আমাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় প্রাকৃতিক চিনি। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে রক্তে গ্লুকোজের স্তর বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
- প্রসাবের রং এর পরিবর্তনঃ অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে প্রসাবের রঙের পরিবর্তন হয়ে থাকে। এতে আমাদের অনেক সময় মনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রসবের রং এর পরিবর্তন আপনার স্বাস্থ্যের উপরে কোন ক্ষতির প্রভাব ফেলবে না।
প্রিয় পাঠক চেরি ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে চেরি ফল থেকে অপকারিতা তখনই লক্ষ্য করবেন যখন আপনি নিয়ম মেনে চেরি ফল খাবেন না কিংবা অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাবেন। তবে আপনি যদি নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ মতন চেরি ফল খান তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য চেরি ফল সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং খুব উপকারী।
গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও কোন অংশে কম নয়। গর্ভকালীন সময় একজন গর্ভবতী মা যদি চেরি ফল খায় তাহলে চেরি ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
চেরি ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উপাদান। চলুন তাহলে জেনে নেই গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের কি কি উপকার হয়।
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে।
- হাড় মজবুত করে।
- বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করে।
- ক্ষত সারাতে সহায়তা করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- দুর্বলতা দূর করে।
- ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- ভ্রুনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
- গর্ভের বাচ্চার হাড় গঠনের সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় চেরি ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাবেন না। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমনকি গর্ভের সন্তানেরও সমস্যা হতে পারে। তবে আমি মনে করি গর্ভাবস্থায় যে কোন ফল খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। এতে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা থাকবে।
চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয়
চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি ইতিপূর্বে জেনেছেন। চেরি ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার হয় সে সম্পর্কে আপনি এখন নিশ্চিত। তবে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে চেরি ফলের বিচি খেলে কি হয়? আসলে অনেকেই এমন প্রশ্ন করে থাকে যে চেরি ফলের বীজ খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি হতে পারে।
অনেকে আবার মনে করেন চেরি ফলের বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী আবার অনেকেই মনে করেন চেরি ফলের বীজ খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়। চলুন তাহলে আপনাদের আজকে জানাই চেরি ফলের বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর।
আপনি যদি অল্প পরিমাণে চেরি ফলের বীজ খান তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের তেমন কোন সমস্যা দেখা দিবে না তবে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফলের বীজ খান তাহলে চেরি ফলের বীজের মধ্যে থাকা সাইনোজেনিক গ্লাইকোসাইড পদার্থ আপনার শরীলের বিষক্রিয়া সৃষ্টিকর করতে পারে।
আরো পড়ুন: শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা
আমরা যখন চেরি ফল খাই তখন এই পদার্থটি ছায়ানাইডে রূপান্তরিত হয় যা অত্যন্ত বিষাক্ত। তাই চেরি ফল খাওয়ার সময় চেরি ফলের বীজ এড়িয়ে চলাই ভালো। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরির বীজ খান তাহলে আপনার বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটে অস্বস্তি, পেট ফোলা, বদহজম ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন চেরি ফল খাওয়ার সময় চেরির বীজ না খাওয়াই আপনার স্বাস্থ্যর জন্য উত্তম।
চেরি ফলের দাম বাংলাদেশ
চেরি ফলের দাম বাংলাদেশে কত সে সম্পর্কে আপনাদের একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চেরি ফলের উপকারিতা জানার পর আপনি হয়তো আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চেরি ফল রাখতে চাচ্ছেন কিন্তু চেরি ফলের দাম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা নেই।
চেরি ফল যেহেতু বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হয় এবং চাহিদা অনেক বেশি তাই চেরি ফলের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় না রাখতে পারলেও চেরি ফলের উপকারিতা দিক বিবেচনা করে অল্প হলেও সপ্তাহে দুই দিন চেরি ফল খাওয়া উচিত।
চেরি ফলের বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি রয়েছে তবে উচ্চগুনমানসম্পন্ন এবং বিশেষ প্রজাতির চেরি ফলের দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। বাজারে আপনি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি চেরি ফল পেয়ে যাবেন।
তবে বিভিন্ন মৌসুম এবং বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে চেরি ফলের দাম কম বেশি হতে পারে। তাই চেরি ফল কেনার সময় আপনি আপনার পরিচিত দোকান কিংবা বিভিন্ন দোকান যাচাই করে চেরি ফল কিনুন। এতে ভাল মানের চেরি ফল পাবেন এবং চেরি ফল কেনার সময় একটু সস্তায় পেতে পারেন।
চেরি ফল চেনার উপায়
চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে অনেকেই গুগলে সার্চ দিয়ে থাকে। বাজারে চেরি ফলের পরিবর্তে চেরি ফলের নাম দিয়ে অন্য ফল বিক্রি করা হয়। ফলে আপনি যদি সঠিকভাবে চেরি ফল চিনতে না পারেন তাহলে চেরি ফল থেকে উপকার পাবেন না। তাই অবশ্যই চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা জরুরী।
তাহলে আপনি বাজারে ভালো মানের এবং সঠিক চেরি ফল কিনতে পারবেন। আমরা আপনাদের সাথে চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে কিছু সহজ পদ্ধতি শেয়ার করলাম। নিচের এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই বাজার থেকে তাজা এবং ভালো মানের চেরি ফল কিনতে পারবেন।
- যে সব চেরি মিষ্টি হয়ে থাকে সেসব চেরির রং গাঢ় লাল কিংবা গাঢ় বেগুনি হয়ে থাকে। আর যে সব চেরি টক হয়ে থাকে সেসব চেরির রং গাঢ় লাল এবং কালো রঙের হয়ে থাকে।
- সাধারণভাবে আকারে বড় হয়ে থাকে এবং টক চেরি গুলো ছোট ও গোলাকার হয় বেশি।
- আসল চেরির ভেতরে সাধারণভাবে একটি বা দুইটি বীজ থাকে।
- আসল চেরি ফলের বীজগুলো সাধারণভাবে বড় আকৃতির হয়।
- আসল চেরি থেকে মিষ্টি এবং তাজা গন্ধ বের হয়।
- যেসব চেরি আসল সে চেরিগুলো চামড়া চকচকে এবং মসৃন হয়ে থাকে তাছাড়া দেখতেও অনেক তাজা মনে হয়।
- আসল চেরি ফল স্পর্শ করলে নরম এবং আঠালো ভাব থাকে।
আশা করি আপনি আসল চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি আসল চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে থাকেন তাহলে এখন থেকে বাজারে চেরি ফল কেনার আগে অবশ্যই উপরোক্ত নির্দেশনা গুলি অনুসরণ করুন। এতে করে খুব সহজেই আসল চেরি ফল পাবেন।
চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম
চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। আর্টিকেলের উপরের অংশে আমরা চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানিয়েছি। এখন আমরা আপনাদের চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চেরি ফল খাওয়ার বিশেষ কোন নিয়ম নেই তবে আপনি যদি সঠিক পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
আরো পড়ুন: আপেল খাওয়ার ১৪ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা দিনের যে কোন সময় চেরি ফল খেতে পারি। চেরি ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে নিয়ম মেনে খেলে উপকারিতা আরো বেশি পাওয়া যায়। আপনি যদি অনিয়মিতভাবে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান তাহলে উপকার পাওয়ার পরিবর্তে আপনার শরীরে ক্ষতি হবে বেশি। চলুন তাহলে জেনে নেই চেরি ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে।
- চেরি ফল কেনার সময় অবশ্যই তাজা চেরি এবং নষ্ট ও থেতলে যাওয়া চেরি কিনা থেকে বিরত থাকুন। । কারণ নষ্ট এবং থেতলে যাওয়ার চেরির ভেতরে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। এতে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
- চেরি ফল বাজার থেকে কিনে আনার পরে কখনোই না ধুয়ে খাবেন না। অনেকের মধ্যে বাজে অভ্যাস রয়েছে তারা বাজারে চেরি ফল কেনার সময় না ধুয়ে খেয়ে থাকে। চেরি ফল না ধুয়ে খেলে চেরি ফলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। এতে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
- চেরি ফল সকালের নাস্তার সাথে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি চান তাহলে বিকেলেও চেরি ফল নাস্তার সাথে খেতে পারেন।
- চেরি ফল বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে আপনি যদি কাঁচা অবস্থাতে যেই ফল চিবিয়ে খান তাহলে চেরি ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব সহজে শরীর শোষিত করতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করার আগে কিংবা পরে এক গ্লাস চেরি ফলের জুস খেতে পারেন। চেরি ফলের জুস খেতে যেমন আকর্ষণীয় এবং সুস্বাদু হয় তেমন শরীরের শক্তি ফিরিয়ে আনে ও শরীরে প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি পূরণ হয়।
- বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট তৈরি করার সময় চেরি ফল ব্যবহার করতে পারেন এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।
- সকালে নাস্তার সাথে, দুপুরে খাবারের সাথে কিংবা বিকেল বেলা নাস্তার সাথে আপনি বিভিন্ন ধরনের উপকরণের সাথে চেরি মিশিয়ে স্যালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।
- তাছাড়া চেরি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সস তৈরি করে পাউরুটি কিংবা নাস্তার সাথে খেতে পারেন।
আশা করি চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি যদি উপরের নিয়ম গুলো ফলো করে প্রতিদিন চেরি ফল খান তাহলে চেরি ফল থেকে আপনি উপকৃত হতে পারবেন এবং চেরি ফল খাওয়ার পরে অপকারিতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
চেরি ফল কোথায় পাওয়া যায়
চেরি ফল কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলের এই অংশ থেকে জেনে নিতে পারেন। বর্তমান বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় ফলের ভেতরে চেরি ফল খুব জনপ্রিয় একটি ফল। যদিও চেরি ফল আমাদের দেশের ফল না বাইরের দেশ থেকে চেরি ফল আমদানি করা হয় তবুও চেরি ফল সকলের খুব পছন্দের একটি ফল।
তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় চেরি ফল চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু চেরি ফলের চাহিদা যেহেতু অনেক বেশি এবং বাংলাদেশে পর্যন্ত পরিমাণে চাষ হয় না তাই চেরি ফলের চাহিদা মেটানোর জন্য বাইরের দেশ থেকে চেরি ফল আমদানি করা হয়।
তবে আপনি যদি চেরি ফল কিনে খেতে চান তাহলে বিভিন্ন ধরনের ফলের দোকানে খুব সহজেই চেরি ফল পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি অনলাইনের বিভিন্ন পেজ থেকেও চেরি ফল সংগ্রহ করতে পারেন। অনেকের চেরি ফল খুব বেশি পছন্দ হওয়ার কারণে বাড়ির ছাদে কিংবা টবে অল্প পরিমাণে চাষ করে খেয়ে থাকে।
মন্তব্য - চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আশা করি চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। চেরি ফল খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের উপকার যেমন হার্ট ভালো রাখতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, ওজন কমাতে, ঘুম ভালো হতে, লিভার ভালো রাখতে, কিডনি ভালো রাখতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইত্যাদি শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে চেরি ফল খুব উপকারী।
আরো পড়ুন: সফেদা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি চেরি ফল শুকনো, তাজা কিংবা যে কোন খাবারের সাথে খান না কেন চেরি ফল থেকে সঠিক উপকারিতা পাবেন তবে অবশ্যই চেরি ফল খাওয়ার আগে চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খান এবং অনিয়মিতভাবে চেরি ফল খান তাহলে চেরি ফল খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হবে বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন এবং এরকম স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল নিয়মিত পেতে আমাদের bdonlineit.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url