আলকুশি বীজের ১০টি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না তাহলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনি খুব মনোযোগ সহকারে পড়ে নিতে পারেন। আমরা আজকের আর্টিকেলে আলকুশি বীজ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো।
আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আরো জানতে পারবেন পুরুষ শক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা, আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা, আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম, আলকুশি বীজ চেনার উপায় এবং আলকুশি পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে আলোচনা বিস্তারিতভাবে শুরু করি।
পেজ সূচিপএ
আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত কারণ আলকুশি বীজ একটি ভেষধ উদ্ভিদ। তাই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানা না থাকলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
আলকুশি বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। তবে প্রতিটি ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে উপকারিতা সাথে সাথে অপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খান তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেই আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমাদের শরীরে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- আলকুশির মধ্যে রয়েছে লেভোডোপা সিরাম। তাই যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ আলকুশির মধ্যে থাকা লেভোডোপা সিরাম লিভারের রোগকে আরো বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খেলে আমাদের অনেক সময় হজমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই অবশ্যই পরিমাণ মতন আলকুশি বীজ খাওয়া উচিত।
- আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে টানিন, ফেনল ইত্যাদি উপাদান। তাই আলকুশি বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে শোধন করে তারপর খাওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খেলে আমাদের শরীরের ওজন কমে না গিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ আলকুশি বীজের কিংবা পাউডারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে তাই অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে জরায়ু উদ্দীপক প্রভাব। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থায় আল কুশি বীজ খান তাহলে জরায়ু ফেটে রক্তপাতের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আলকুশি বীজ গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভের সন্তানেরও ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকায় উত্তম।
- অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজের পাউডার খেলে আমাদের বমি বমি ভাব, এলার্জির সমস্যা এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।
- আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খান তাহলে আপনার উচ্চ মাত্রার এল ডোপার সমস্যা হতে পারে। আর এল ডোপার সমস্যা হলে আমাদের শরীরে হ্যালুসিনেশন, বিভ্রান্তি এবং সিজোফ্রোনিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
- যারা নিউরোপ্যাথিক সাইকোসিস এবং অনিয়মিত হ্রদস্পন্দনের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- যারা বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন যেমন পারকিনসন রোগের, বিষন্নতা চিকিৎসার জন্য ইত্যাদি। আর এসব ওষুধের ওপর আলকুশি বীজের পুষ্টি উপাদান মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে থাকে। তাই যারা এসব ওষুধ সেবন করছেন তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর আলকুশি বীজ খাওয়া উচিত।
- এছাড়া যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে এবং দুগ্ধদানকারীর মা রয়েছেন তারা আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
আপনি যদি আলকুশি বীজ খাওয়ার কথা ভাবেন তাহলে অবশ্যই আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। আলকুশি বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে অবশ্যই সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। আমরা আর্টিকেলের নিচের অংশে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই আপনি যদি আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
পুরুষ শক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা
পুরুষ শক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা ও কোন অংশে কম নয়। বহু প্রাচীনকাল আগে থেকেই পুরুষদের জনস্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আলকুশি বীজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আলকুশি বীজ কিংবা বীজের গুঁড়া পুরুষরা প্রতিদিন খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয় এবং যৌন মিলনের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। চলুন তাহলে পুরুষ শক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
- আপনি যদি প্রতিদিন আলকুশি বীজের গুড়ার সাথে এক চামচ ঘি এবং মিছরি মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে শুক্রানুর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে নিয়ম করে আলকুশি বীজ খেলে পুরুষদের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় কারণ আলকুশি বীজ নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে পুরুষদের শরীরে কাজ করে থাকে।
- যে সব পুরুষেরা অলিগোস্পার্মিয়াতে আক্রান্ত তারা যদি প্রতিদিন আল কুশি বীজ খায় তাহলে স্পাম বৃদ্ধি পায় এবং শুক্রাণু তৈরি হয়।
- যেসব পুরুষদের লিঙ্গ শিথিল, ধাতুর সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন আলখুশি বীজ থেঁতো করে দুধের সাথে মিশিয়ে খায় তাহলে লিঙ্গের শক্তি ফিরে আসে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- আলকুশি বীজ খেলে পুরুষদের শরীরে ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধি পায়। আর ডোপামিন হরমোন মেজাজ শান্ত রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া যেসব পুরুষদের অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ রয়েছে তারা আলকুশি বীজ খেলে স্বপ্নদোষ সমস্যা দূর হয়।
- যেসব পুরুষদের বীর্য অনেক বেশি পাতলা তারা নিয়ম করে আলো খুশি বীজ খেতে পারেন। আলকুশি বীজ বীর্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, বীর্যের গতিশীলতা বাড়ায় এবং বাচ্চাদানে সক্ষম করে তুলে।
- এছাড়া যেসব পুরুষেরা অল্পতে দুর্বল হয়ে পড়ে শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত হয় তারা আলকুশি বীজ খেলে এসব সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যায়।
আপনি যদি উপরের সমস্যাগুলোই ভুগে থাকেন এবং সমাধান খুঁজে না পান তাহলে অবশ্যই আজকে থেকে আলকুশি বীজ খাওয়া শুরু করুন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই আপনি উপরের সমস্যাগুলোর সমাধান পেয়ে যাবেন।
তবে আপনার যদি সমস্যাগুলো খুব বেশি জটিল হয়ে থাকে তাহলে আলকুশি বীজ খাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই আলোচনা করব তাই আর্টিকেলটির নিচের অংশ পড়া শুরু করুন।
আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা
আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। আলকুশি বীজ বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু আলকুশি বীজই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী না আলকুশি গাছের পাতা ও শিকরও আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুব উপকারী। চলুন তাহলে আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দেই।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
- বাতের ব্যথা দূর করেঃ যাদের বাতের ব্যথার সমস্যা রয়েছে তারা যদি আলকুশি বীজ খায় তাহলে হাড়ের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমে এবং বাতের ব্যথা দূর হয়।
- শারীরিক দুর্বলতা দূর করেঃ আলকুশি বীজ শারীরিক দুর্বলতা দূর করতেও সহায়তা করে। আপনি যদি শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল অনুভব করেন এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে আলকুশি বীজ খেলে শারীরিক দুর্বলতা দূর হবে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব কমবে।
- পেটের সমস্যা দূর করেঃ আলকুশি বীজ পেটের সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে। আলকুশি বীজের গুড়োর সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় এবং অন্তের কার্যকারিতা বাড়ে।
- হাত-পা কাঁপা রোগ দূর হয়ঃ যাদের হাত-পা কাঁপার সমস্যা রয়েছে তারা যদি আলকুশি বীজ খায় তাহলে হাত-পা কাঁপা রোগ কমে। আলকুশি বীজের সাথে ছাগলের দুধ ভালো ভাবে ফুটিয়ে অল্প পরিমাণ মধু দিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেলে হাত কাঁপা রোগ দূর হয়।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে ন্যুট্রপিক উপাদান। আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী নামক ল্যাবডোমা অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের শরীরের ডোপামিন বৃদ্ধির কাজ করে। আর ডোপমিনের কাজ হল স্নায়ুকে সংকেত প্রেরণ করতে সহায়তা করা। তাই আপনি যদি প্রতিদিন নিয়ম করে আলকুশি বীজ খান তাহলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আলকুশি বীজ যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে অ্যালকালয়েড। আর এই উপাদানটি আমাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনকে পুনরুর্জীবিত করতে সহায়তা করে। ফলে আমাদের শুক্রাণুর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কার্যকারিতা বাড়ে।
- টিউমার দূর করেঃ আলকুশি বীজের মধ্যে রয়েছে মিথানল নামক এক ধরনের উপাদান। আর এই উপাদানটি আমাদের শরীরের টিউমার বৃদ্ধিতে রোধ করে এবং টিউমারের কোষগুলোকে বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আলকুশি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়ম করে আলকুশি বীজ খেলে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে এবং শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ আলকুশি বীজ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আলকুশি বীজের মধ্যে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীর থেকে ক্যান্সারের কোষ গুলো বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দূর করেঃ আলকুশি বীজ বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়ম করে আলকুশি বীজ খেলে শরীরে প্রলাক্টিন হরমোনের পরিমাণ কমাতে পারে এবং দূর হতে পারে আপনার বন্ধ্যাত্বের সমস্যা।
- বিষাক্ত বিষক্রিয়াঃ আলকুশি বীজ বিষাক্ত বিষক্রিয়াও দূর করে। আপনার শরীরের যদি কোথাও কোন বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দেয় তাহলে ক্ষতস্থানে আলকুশি বীজের গুঁড়ো লাগালে খুব দ্রুত বিষক্তিয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং যন্ত্রণা কমে যায়।
- কলেরা রোগ দূর করেঃ আলকুশি বীজ কলেরা রোগ দূর করতেও সহায়তা করে। আলকুশি বীজের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে কলেরা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ফোঁড়ার সমস্যা দূর করেঃ আলকুশি বীজ পড়ার সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। আপনার শরীরের কোথাও যদি ফোঁড়া উঠে তাহলে আলকুশি বীজ খেতে পারেন কিংবা আলকুশি পাতার রস অথবা শিকড় ভালোভাবে বেটে ফোঁড়ার উপর লাগালে ফোড়া ফেটে যায় এবং ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
আলকুশি বীজের অপকারিতা
আলকুশি বীজের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খান তাহলে আপনার বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আলকুশি বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে তাই অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খেলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তারা যদি আলকুশি বীজ খায় তাহলে আলকুশি বীজের মধ্যে থাকা অক্সালেট কিডনির পাথর আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খান তাহলে পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
আরো পড়ুন: কুলেখাড়া পাতার রস কখন খেতে হয়
আলকুশি বীজ আপনার জন্য উপকারী তবে অবশ্যই সঠিক নিয়মে খেতে হবে। আমরা আজকের আর্টিকেলে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। আমাদের আজকের আর্টিকেল থেকে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও আপনি বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। আপনার যদি উপরোক্ত সমস্যাগুলি থাকে তাহলে আলকুশি বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। আলকুশি বীজের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আলকুশি বীজের চূর্ণ কিভাবে খেলে আমরা সবচেয়ে বেশি উপকার পাব সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে।
তবে আপনি যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি সপ্তাহে একবার কিংবা দুইবার ১০ থেকে ১৫ গ্রাম আলকুশি বীজ খেতে পারেন। এটাই আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হবে। চলুন তাহলে আপনাদের জানাই আলকুশি বীজ কিভাবে খেতে পারবেন সে সম্পর্ক।
- সিমের বীজ এবং আলকুশি বীজ প্রায় একই রকম দেখতে তাই আপনি সিমের বীজ যেভাবে রান্না করে খান একই নিয়মে আলুশের বীজও রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়া আলকুশির বীজ বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিশিয়ে স্যালাদ করেও খাওয়া যায়।
- আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবেন কিংবা পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার কথা ভাবেন তাহলে সকালের চা এর পরিবর্তে আলকুশি পাউডার দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। সকালে এক কাপ আলকুশি পাউডারের চা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। আর বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। গরম পানিতে দারুচিনি গুড়া, চিনি এবং সহজে তৈরি করা যায়। তবে আপনি যদি ডাইটের কথা ভাবেন তাহলে চিনি এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিন সকাল এবং রাতে দুধের সাথে মিশিয়ে আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারেন। এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ আলকুশি বীজের পাউডার নিয়ে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে খেলে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের দুর্বলতা দূর হয়।
- আলকুশি বীজের পাউডার বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে মিশেও আপনি খেতে পারেন যেমন রুটি বানানোর সময় রুটির সাথে মেশাতে পারেন, ভাত খাওয়ার সময় ভাতের সাথে মেশাতে পারেন কিংবা বিভিন্ন ধরনের সবজি সাথে মিশেও আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারেন।
- আপনার যদি আলকুশি বীজের পাউডার খেতে ভালো না লাগে তাহলে আলকুশি বীজের ক্যাপসুল ও খেতে পারেন। আলকুশি বীজের ক্যাপসুল সাধারণভাবে ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে যেকোনো ওষুধের দোকানে বিক্রি হয়। তাই আপনি পাউডার খেতে না পারলেও ক্যাপসুল খেয়েও বিভিন্ন ধরনের উপকার পেতে পারেন। তবে আলকুশি ক্যাপসুল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
আশা করি আপনি আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম এবং পুরুষশক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি যদি শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে আপনি উপরের পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে আলকুশি বীজ খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে পারেন।
আরো পড়ুন: পাথরকুচি পাতার ২৪টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আমরা আপনাকে সাধারণভাবে আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানালাম। আপনি যদি আলকুশি পাউডার খেতে চান তাহলে অবশ্যই আগে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ ঠিক করে সঠিক নিয়মে আলকুশি পাউডার খান।
আলকুশি বীজ চেনার উপায়
আলকুশি বীজ চেনার উপায় সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে আমাদের আর্টিকেলের এই অংশ থেকে জেনে নিতে পারেন। আলকুশি গাছ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আলকুশি বীজ চিনতেও আমাদের একটু সমস্যা হয়।
আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলের নিচে অংশগুলো পড়েন তাহলে অবশ্যই আজকের পর থেকে আলকুশি বীজ চিনতে আপনার আর কোন সমস্যা হবে না। তাহলে চলুন আলকুশি বীজ চেনার কিছু সহজ উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আলকুশি বীজ বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে তবে আলকুশি বীজ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন -
- পাহাড়ি আলকুশি বীজঃ পাহাড়ি আলকুশি বীজের গায়ে লোম থাকে এবং আলকুশি বীজগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করলে অনেক পরিমাণে চুলকায়। পাহাড়ি আলকুশি বীজগুলো দেশি এবং চাষকৃত বীজের চাইতে ছোট হয়ে থাকে। পাহাড়ি আলকুশি বীজের রং একেবারে কুচকুচে কালো হয় না। পাহাড়ি আলকুশি বীজের রং কিছুটা মিশ্রন হয়ে থাকে।
- দেশী বা চাষকৃত আলকুশি বীজঃ দেশি বা চাষকৃত আলকুশি বীজের মধ্যে খুব কম পরিমাণে লোম দেখা যায় হলে দেশি আলকুশি কিংবা চাষকৃত আলকুশি বীজ স্পর্শ করলে শরীরে কোন চুলকানি হয় না। দেশী এবং চাষকৃত আলকুশি বীজ দেখতে কিছুটা তেতুলের মত। দেশি এবং চাষকৃত আলকুশি বীজ দেখতে কুচকুচে কালো হয় এবং আকারে কিছুটা বড় হয়। তাছাড়া বীজ শুধু কুঁচকুচে কালো হয় অন্য কোন রঙের মিশ্রণ থাকে না। আলকুশি বীজের ভেতরের রং কিছুটা সাদা কিংবা হলুদ হয়ে থাকে।
আপনি যদি আলকুশি বীজ খেতে চান তাহলে অবশ্যই উপরের উপায় গুলো অবলম্বন করে সঠিক আলকুশি বীজ সংগ্রহ করুন। তবে পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ পাহাড়ী এবং জংলি আলকুশি বীজ অত্যান্ত ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং আমাদের শরীরে শতভাগ কার্যকারিতা দেয়।
আলকুশি পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা
আলকুশি পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা রয়েছে অনেক। আমরা আর্টিকেলের একেবারে শেষের অংশে চলে এসেছি। আর্টিকেলের ওপরে আমরা আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছি এখন আমরা আলকুশি পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে আর্টিকেলটি শেষ করব। তাহলে চলুন আলকুশি পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই
- যারা দীর্ঘদিন যাবত সর্দি, কাশি ও ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত তারা আলকুশি গাছের শিকড় ও পাতা খেতে পারেন। আলকুশি গাছের পাতা রস করে কিংবা গাছের শিকড় রস করে খেলে সর্দি, কাশি দূর হয় ও ঠান্ডা জনিত সমস্যা কমে।
- যাদের মিত্র নালীর সমস্যা রয়েছে তারা যদি আলকুশি পাতা ও শিকড়ের রস খায় তাহলে প্রসবের ইনফেকশন এর সমস্যা দূর করার সাথে সাথে মিত্র নালীর বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় হয়।
- যারা আমাশায় সমস্যায় ভুগছেন তারা আলকুশি শিকড়ের রস প্রতিদিন সকাল বেলা খেলে আমাশয় সমস্যা খুব দ্রুত কমে।
- আলকুশি পাতার রস যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান তাহলে আপনার গোদ রোগের সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে আলকুশির শিকড় বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে গোদ রোগের উপশম হয়।
- আলকুশি পাতা কিংবা কান্ডের রস চোখের সমস্যা দূর করতেও খুব কার্যকরী। চোখে যদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে কিংবা দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তাহলে আলকুশি পাতা কিংবা কান্ডের রস করে প্রতিদিন খেতে পারেন। এতে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
- আলকুশি শিকড় বুকে জমে থাকা পথ দূর করতেও সহায়তা করে। খুব ভালোভাবে আলকুশি শিকড় ধুয়ে পানিতে সিদ্ধ করে সকাল বিকাল নিয়মিত খেলে বুকে জমে থাকা কতদূর হয় এবং বুক ব্যথা ভালো হয়।
- আলকুশি পাতার রস রক্তপাত বন্ধ করতেও সহায়তা করে। আপনার যদি রক্তপাতের সমস্যা থাকে তাহলে আলকুশি পাতার রস ভালোভাবে পেটে ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন কিংবা রস করে দিনে দুইবার খেতে পারেন। এতে খুব তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ হবে।
- আমাদের শরীরে অনেক সময় ফোড়া উঠে এবং প্রচন্ড ব্যথা হয়। এই ফোঁড়ার সমস্যা দূর করার জন্য আপনি আলকুশি পাতা এবং শিকড় ব্যবহার করতে পারেন। আলকুশি পাতার রস বেটে ফোড়াই দিলে খুব সহজে ফোঁড়া ফেটে যায় এবং ব্যথার উপশম হয়।
- আলকুশি পাতার রস এবং শিকড় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য শুধু উপকারী না। আলকুশি পাতার রস এবং শিকড় গবাদি পশুর জন্য খুব উপকারী। পশু পাখি কিংবা গুয়াবাদি পশুর যদি কোন স্থানে ক্ষত হয় তাহলে আলকুশি পাতার রস কিংবা শিকড় বেটে লাগালে ক্ষতস্থান খুব দ্রুত সেরে যায়।
- আলকুশি পাতার রস নিয়মিত খেলে যৌনাঙ্গের চুলকানি দূর হয় এবং যৌনাঙ্গের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া রোধ করতে সহায়তা করে।
আলকুশি বীজের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন আলকুশি পাতা ও শিকড়েরও উপকারিতা অনেক। তাই আলকুশি বীজ এবং আলকুশি পাতা ও শিকড় আপনি আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত খেতে পারেন।
পরিশেষে - আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বহু প্রাচীনকাল আগে থেকেই আলকুশি বীজ বিভিন্ন ধরনের রোগের মহা ওষুধ হিসেবে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আলকুশি বীজ খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে অবশ্যই আলকুশি বীজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখা জরুরী।
আরো পড়ুন: হাতিশুর গাছের শিকড় কোমরে বাধলে কি হয়
আপনি যদি আলকুশি বীজ থেকে সঠিক উপকারিতা পেতে চান তাহলে অবশ্যই অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ না খেয়ে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমাণ মতন আলকুশি বীজ খাওয়ার অভ্যাস করুন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং পরে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আমাদের আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এরকম আরো তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে আমাদের বিডি অনলাইন আইটি ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ফলো করুন।
বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url