আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়

আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা যারা জানেন না তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি না টেনে সম্পূর্ণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করবেন।
যদি আপনারা এই আর্টিকেল একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়, গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা এই সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জেনে যাবেন।
পেজ সূচিপএ

আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়

আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনারা যারা জানতে এই আর্টিকেলে এসেছেন তারা অবশ্যই এই আর্টিকেল ধৈর্য সহকারে পড়বেন। আলসার হলো হজম প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জটিল সমস্যা, যা পেটের ভেতরের স্তরে ক্ষত সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা দীর্ঘমেয়াদী এসিডিক পেইনকিলার ব্যবহারের কারণে হয়। 
আলসারের চিকিৎসার জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন এবং তা নির্দিষ্ট সময় ধরে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলসারের ঔষধ সাধারণত দুই থেকে আট সপ্তাহের জন্য দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসক রোগের মাত্রা ও লক্ষণ অনুসারে এই সময়কাল নির্ধারণ করেন। তাহলে আশা করি আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয় তা সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন। 

আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

আপনারা যারা আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান তারা অবশ্যই নিচের আলোচনাটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কারণ নিচে আমরা কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। তাই আসুন আর দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

বাঁধাকপির রসঃ যদি আপনারা আলসার থেকে ঘরোয়া উপায়ে মুক্তি পেতে চান তাহলে ব্যবহার করতে পারেন বাঁধাকপির রস। এটি আপনার আলসার দ্রুত নিরাময় অনেক বেশি সাহায্য করবে।

মধুঃ মধু হল বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই মধু আপনার প্রাকৃতিকভাবে আলসার নিরাময় করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। তাই আপনারা চাইলে আলসার রোধ করার জন্য মধু খেতে পারেন।

রসুনঃ এটি H. pylori ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপনার আলসার রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

হলুদঃ এছাড়াও আপনার আলসার থেকে মুক্তি দিতে পারে হলুদ। কারণ হলুদ আপনার পেটের আস্তরণে সহায়তা করে ফলে এসিড কমাতে সাহায্য করে।

নারকেলের পানিঃ নারকেলের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা পাকস্থলীর ব্যথা কমায় এবং আলসারের নিরাময়ে সাহায্য করে। দিনে দুইবার নারকেলের পানি পান করুন।

কলাঃ কলা প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে, যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমায়। প্রতিদিন একটি পাকা কলা খাওয়া আলসার নিরাময়ে সহায়ক।

পেঁপেঃ পেঁপেতে পেপেইন নামে একটি এনজাইম রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পাকস্থলীর অম্লতা কমায়। পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে।

আদাঃ আদা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং প্রদাহ কমায়। এক কাপ গরম পানিতে আদা সেদ্ধ করে চা বানিয়ে পান করুন।

দইঃ দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটিয়ে হজমে সহায়তা করে। প্রতিদিন এক কাপ তাজা দই খেলে আলসার উপশম হয়।

পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আপনার পেটের আলসার দূর হতে সাহায্য করবে। তাই চেষ্টা করবেন পানি পান করার।

ক্যাফিন যুক্ত খাবার যেমন কফি, ইত্যাদি এগুলো খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এগুলো খাবার যদি আপনি এড়িয়ে চলতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার আলসার নিরাময় হবে। তাহলে বন্ধুরা বুঝতেই পারছেন আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা, সম্পর্কে আপনারা যারা জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল। পাকস্থলীরর আলসারের সবচেয়ে সাধারণ যে লক্ষণ রয়েছে সেটি হল এক ধরনের ব্যথা। পেটের মাছ বরাবর অনেক বেশি জ্বালাপোড়া কিংবা সারাক্ষণ ব্যথা হয়ে থাকে। সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় তা নয় কিছু কিছু মানুষের এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে আরো অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে যেমন-

  • জ্বালাপোড়া বা কুঁচকানো পেটে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব
  • বদহজম
  • অবসাদ
  • খাবারের মধ্যে বা রাতে ব্যথা প্রায়শই বেড়ে যায়বমি
  • ক্ষুধামান্দ্য
  • মাথা ঘোরা ইত্যাদি। মূলত এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেই।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা-

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস (PPI): যদি আপনারা আলসার নিরাময় করতে চান তাহলে পাকস্থলীর অ্যাসিড উত্পাদন হ্রাস করুন।

H2-রিসেপ্টর প্রতিপক্ষ: এছাড়াও আপনাকে বুঝতে হবে অ্যাসিড উত্পাদন হ্রাস কিন্তু সাধারণত পিপিআইস থেকে কম শক্তিশালী।

অ্যান্টাসিডস: এছাড়াও আপনারা পাকস্থলীর এসিড নিরপেক্ষ করুন এবং পাশাপাশি অস্থায়ী ত্রাণ প্রদান করুন

অ্যান্টিবায়োটিকগুলো: এরপর চাইলে এইচ পাইলোরি সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয় যদি এটি আপনার অন্তর্নিহত কারণ হয়।

মূলত এ ধরনের ওষুধ গুলো আপনার গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। তাই আপনারা চাইলে এ ধরনের ওষুধগুলো সেবন করে আপনার গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করতে পারেন। তবে এই ওষুধগুলো সেবন করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। (তথ্যসূত্রঃ www.medicoverhospitals.in)

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা 

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে সকলেরই ভালোভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন কারণ বর্তমান সময়ে দেশ থেকে সমস্যায় আমরা কম বেশি সকলেই বুকে থাকি। গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করতে কি কি খাবার গ্রহণ করা উচিত বা প্রয়োজন তা আজকে আমি জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। 

যদি আপনাদের মধ্যে কারো গ্যাস্ট্রিক আলচার হয় কিংবা কোন রোগী থাকে তাহলে অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা খাবার না খাওয়া নয় ভালো। এক্ষেত্রে যদি পারেন তাহলে টক, দই, ঘোল, ইসবগুলের ভুসি এগুলো খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও আলু সেদ্ধ, পাতলা মুরগির সোপ নরম ভাত সুজি ইত্যাদি খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা
একজন মধ্যবয়সী গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীদের খাদ্য তালিকায় সকালের নাস্তা নরম সিদ্ধ ডিম, একটি পাকা কলা একটি এবং পাতলা সুজি এক কাপ খাওয়ানো যেতে পারে। এরপর সকাল দশটা থেকে ১১ টায় এক গ্লাসগুলির শরবত খেলে আরো বেশি উপকার পাবে। এরপর দুপুরের খাবারে পোলাও চাউলের নরম ভাত দুই কাপ এবং নরম দুই পিস মাছ ও পেঁপে তরকারি এক কাপ এবং পাতলা ডাল এক কাপ খাওয়াতে পারেন। 

পাশাপাশি বিকেলে পাউরুটি জেলি, টক মিষ্টি দই এগুলো খেতে পারেন পরিমাণ মতো। এরপর রাতে পোলাও চালের দুই কাপ ভাত নরম মুরগী কিংবা মাছ এক পিস এবং পাতলা করে কাটা শসা খেতে পারে। যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে আশা করা যায় আপনার গ্যাস্টিক সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।

পেপটিক আলসার কত দিনে ভালো হয়

পেপটিক আলসার কতদিনে ভালো হয় আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এটি মূলত প্রায় দুই মাস সময়ের মধ্যে পুরোপুরি সেরে যায়। তবে চিকিৎসক আপনার আলসারের কারণ এর উপর নির্ভর করে কতদিন সময় লাগতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। যদি আপনি এনএসএআইডিসের মতো ওষুধগুলোর নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে আশা করা যায় আপনার আলসার ভালো হয়ে যাবে। 

তখন আপনারা ডাক্তারের ওষুধগুলো খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তার এসিডিটি কমানোর জন্য ওষুধ কিংবা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বলবেন। তাহলে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন পেপটিক আলসার কতদিনে ভালো হয় এবং আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়।

কি খেলে আলসার ভালো হয়

কি খেলে আলসার ভালো হয় সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। যদি আপনারা আলসার ভালো করতে চান তাহলে টাটকা ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যেমন কলা, আপেল, ডালিম, আঙ্গুর ইত্যাদি। এছাড়াও আপনারা সবজির মধ্যে পেঁপে বাঁধাকপি নরম শাক মিষ্টি আলু লাউ চাল কুমড়া আলু গাজর মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কারণ এ ধরনের খাবারগুলো খাওয়ার ফলে আপনার আলসার দূর করা সম্ভব হবে। 
এছাড়াও খাদ্য তালিকায় আরো কিছু যোগ করতে পারেন যেমন প্রতিদিনের খাবারে ডিম সামুদ্রিক মাছ মুরগির মাংস চর্বি ছাড়া ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। অনেকেই আলসার ভালো করার জন্য বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু উপরে উল্লেখিত যে খাবারগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলো খেলে আরো দ্রুত আপনার গ্যাস্ট্রিক আলসার ভালো হবে। 

মূল কথা হলো যদি আপনি সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারেন এবং সুস্থ জীবন যাপন পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার পেপটিক আলসার অবশ্যই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়

আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়? এই বিষয় সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে। পেটের আলসার, যা সাধারণত গ্যাস্ট্রিক আলসার নামে পরিচিত, একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মূলত পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ স্তরে ঘা বা ক্ষতের কারণে হয়। যদিও আলসার নিজেই গুরুতর নয়, সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেকেরই প্রশ্ন আলসার থেকে কি ক্যান্সার হতে পারে? উত্তরটি হলো, সব ধরনের আলসার ক্যান্সারে পরিণত হয় না। 
আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়
তবে, কিছু ক্ষেত্রে হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. Pylori) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকলে, এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘস্থায়ী আলসার বা গ্যাস্ট্রাইটিস যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি ম্যালিগন্যান্ট পরিবর্তন আনতে পারে।

কীভাবে আলসার থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াবেন?

নিয়মিত চিকিৎসাঃ আলসারের প্রাথমিক লক্ষণ যেমন ব্যথা পেট জ্বালা ইত্যাদি। তাই এ ধরনের কোন লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সঠিক রোগ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়ে উঠুন।

সুস্থ খাদ্যাভ্যাসঃ যত সম্ভব মসলাযুক্ত খাবার কিনবা তেল চর্বিযুক্ত খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এ ধরনের খাবারগুলো খাওয়ার ফলে আপনার আলসার থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যদি পারেন তাহলে টাটকা ফলমূল ও শাক সবজি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।

অ্যালকোহল ও ধূমপান ত্যাগঃ আলসা থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রথমে আপনাকে অ্যালকোহল ও ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ এটি আলসারের অবস্থা আরো খারাপ করতে পারে। ফলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথাঃ আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয়

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আপনারা সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে আলসারের ঔষধ কতদিন খেতে হয় এবং আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশা করা যায় এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ে আপনারা অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। তাই যারা উপকৃত হয়েছেন তারা অবশ্যই আর্টিকেলে আপনার নিজস্ব মতামত জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন পাশাপাশি বন্ধুদের মাঝে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url