তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনার যদি জানা না থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়া শুরু করুন। তাহলেই তুলসী পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করি। 
পেজ সূচিপএ

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা জানবো। তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী এ কথা প্রায় আমাদের সবারই জানা। কিন্তু তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে কেন উপকার পাওয়া যায় সে কথা আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। তুলসী পাতা বিভিন্ন ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

তুলসী পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের ভেতরে মারাত্মক রোগ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি মারাত্মক রোগগুলো দূর করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তুলসী পাতার মধ্যে নানান গুণ থাকার কারণে বহু যুগ আগে থেকেই তুলসী পাতা ওষুধের তালিকায় স্থান পেয়েছে। তাহলে চলুন তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

তুলসী পাতার খাওয়ার উপকারিতা

ঠান্ডা জনিত সমস্যা: বহু যুগ আগ থেকেই তুলসী পাতা ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের শরীরের যে কোন ঠান্ডা দূর করতে তুলসী পাতা খুব দ্রুত কাজ করে। কারো বুকে যদি অনেক দিন ধরে কম জমে থাকে তাহলে তুলসী পাতার রস আদা ও মধু একসাথে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তুলসী পাতার রসের সাথে আদার রস একসাথে গরম করে মধু মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত ঠান্ডা সমস্যা দূর হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডার সমস্যা হলে প্রতিদিন সকালে আপনি তুলসী পাতা দিয়ে চা করে খেতে পারেন এতেও উপকার মিলবে।

ব্যথার সমস্যা: বিভিন্ন ধরনের ব্যথা কমাতে তুলসী পাতা খুবই কার্যকর। আপনার যদি ঠান্ডা কিংবা অন্য কোন কারণে গলা ব্যথা করে তাহলে তুলসীপাতা গরম করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এছাড়া শরীরের কোথাও যদি ব্যথা হয় তাহলে তুলসী পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে খুব দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া গলা ব্যথা যদি সামান্য পরিমাণে হয় তাহলে আপনি কাঁচা তুলসী পাতা খুব ভালোভাবে ধুয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন গলা ব্যথা কমে যাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তুলসী পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি মোকাবেলা করতে তুলসী পাতা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তুলসী পাতা শরীরের তাপমাত্রা কমাতেও সাহায্য করে আপনার যদি হালকা জ্বর হয় তাহলে তুলসীপাতার পানি ফুটিয়ে খেতে পারেন এতে জ্বর কমে যাবে।

ওজন হ্রাস: তুলসী পাতা ওজন কমাতেও খুব কার্যকরী। তুলসীপাতা শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ওজন কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন তুলসীপাতা খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন তারা প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ার আগে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। তুলসীপাতা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তে সুগার কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ডায়াবেটিস ওষুধেরও তুলসীপাতার ব্যবহার করা হয়। কারণ তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে স্যাপোনিন, এিতারপিনিন, ফ্ল্যাবোনয়েড। আরে উপাদানগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে: তুলসী পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং ক্যান্সারের কোষ গুলো মেরে ফেলতে ভূমিকা রাখে। তুলসী পাতা মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধে উপাদান যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউনিল এবং এপিজেনিন। আর এই উপাদান গুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে দারুন কার্যকরী। এছাড়া পোস্টেট ক্যান্সার, বেস্ট ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়।

গ্যাসের সমস্যা: তুলসী পাতা গ্যাসের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত তুলসী পাতা খেলে আমাদের কিডনি পরিষ্কার থাকে, পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়, লিভার ভালো থাকে, তুলসী পাতা রক্তনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং বদহজম ও আলসার থেকে দূরে রাখে।

চোখ ও দাঁত: তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আর এ উপাদান গুলো আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, দাঁত মজবুত করতে এবং মুখের ভিতরে বিভিন্ন দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

তুলসী পাতা খাওয়ার অপকারিতা

তুলসী পাতা খাওয়ার যেমন বিশেষ উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুলসী পাতা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারী বেশি তবে খুব অল্প পরিমাণে হলেও তুলসী পাতা খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। চলুন তাহলে তুলসী পাতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।

  • তুলসী পাতা ঠান্ডার জন্য বিশেষ উপকারী তবে অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খেলে শ্বাসকষ্ট,মূএ কিংবা কাশি হওয়ার সময় রক্ত যেতে পারে।
  • যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা তুলসী পাতা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন কারণ অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আপনার ডায়াবেটিস কমে গিয়ে হাইপোগ্লাসেমিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সর্তকতা থাকতে হবে। অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে আপনার গর্ভপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
  • যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে কিংবা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তুলসী পাতা খাবেন।
  • তুলসী পাতা দাঁতের জন্য উপকারী তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে আপনার দাঁতের ফাঁকে কালো দাগ পড়তে পারে।
  • যারা কোন সার্জারি করার কথা ভাবছেন তারা অবশ্যই তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ তুলসী পাতার রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে তাই অতিরিক্ত সেবনের ফলে আপনার রক্ত জমাট বাধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই সার্জারির দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করুন।
  • তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। তাই অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে শরীরে পটাশেমের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ নিচে নেমে যেতে পারে। আপনি যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেন তাহলে অবশ্যই তুলসী পাতা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
উপরের এই সর্তকতা গুলো অবলম্বন করে আপনি তুলসী পাতা খেতে পারেন। আপনি যদি উপরের এই সতর্কতা গুলো ঠিকমতো মেনে চলেন তাহলে তুলসী পাতা আপনার জন্য নিরাপদ। তাই অবশ্যই নিয়ম করে পরিমাণ মতন তুলসী পাতা খান। কারণ তুলসী পাতা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী একটি খাদ্য।

খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা 

খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে বিশেষ কিছু ওষুধী গুনাগুন। আর আপনি যদি খালি পেটে তুলসী পাতা খান তার গুনাগুন আরো অনেক বেশি বেড়ে যায়। প্রতিদিন খালি পেটে তুলসী পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর সাথে সাথে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, ক্যান্সারের ঝুঁকি, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, কিডনি ও লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে, এবং চোখ ও দাঁতের জন্য বিশেষ উপকারী। 
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আমাদের ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং সিজনালফ্লুর মত অসুখ নিরাময় ও সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসীপাতা ও মধু মিশিয়ে খেলে কাশির সমস্যা থাকলে তা দূর হয়। তুলসী পাতা গলা ব্যথা দূর করতে ও কার্যকরী। খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে আপনার পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বদহজম ইত্যাদি দূর হয়। 

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই তিনটা তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া তুলসী পাতার রস করে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে চায়ের সাথে তুলসী পাতা মিশিয়ে চা হিসেবে খেতে পারেন।

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর তুলসী পাতা খেলে কাশি অনেক দ্রুত দূর করা সম্ভব। কাশির জন্য তুলসী পাতা আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে বহু যুগ আগে থেকেই পরিচিত। শিশু কিংবা বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের জন্যই তুলসী পাতা কাশির ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তুলসী পাতা খেলে অনেক দ্রুত কাশি কমে আসে। তাছাড়া আপনার যদি বুকের ভেতরে কফ জমে থাকে তাহলে তুলসী পাতা রস করে খেলে কফ সহজেই বাইরে বের হয়ে আসে। 
তবে অবশ্যই তুলসী পাতা থেকে সঠিক উপকার পাওয়ার জন্য নিয়ম করে তুলসী পাতা খেতে হবে। তুলসী পাতা খুব ভালোভাবে থেঁতো করে রস বের করে তার সাথে আদা থেঁতো করে রস বের করে একসাথে গরম করে নিন। এবং সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে সেবন করুন। দুই এক দিন এভাবে নিয়ম করে তুলসী পাতা খেলে আপনার কাশি অনেক দ্রুত কমে আসবে। 

সকাল বেলা খালি পেটে দুই তিনটা তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে কাশি থেকে অনেকটা আরাম পাবেন। এছাড়া প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা চায়ের ভেতর দিয়ে খেতে পারেন। এভাবে নিয়ম করে তুলসী পাতা এক সপ্তাহ খেলেই আপনার কাশি কমে যাবে।

তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়

তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। প্রতিদিন সকালে কিংবা সারাদিনের যে কোন সময় আপনি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। যদি আপনার ঠান্ডা জনিত সমস্যা যেমন কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, বুকে কফ জমা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে অবশ্যই দুই তিনটা তুলসী পাতা খুব ভালোভাবে ধুয়ে কাঁচা অবস্থায় চিবিয়ে খেলে এসব সমস্যা দূর হয় এছাড়া আপনি তুলসী পাতা ফুটন্ত গরম পানিতে সেদ্ধ করে পানি খেতে পারেন। 

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কিছু পরিমাণ তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে খেতে পারেন এতে পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গ্যাস্ট্রিক, পেটব্যথা কিংবা লিভারের সমস্যা দূর হয়। তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা

মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। মধু ও তুলসীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর উপাদান। বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার জন্য মধু এবং তুলসী পাতা আমরা খেয়ে থাকি। বিশেষ করে ঠান্ডা জনিত যেকোনো সমস্যার মধু এবং তুলসী পাতা যাদুর মত কাজ করে। তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আর মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। 
মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা
আর এই দুটি উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে, ঠান্ডা কমাতে, কাশি কমাতে, গলা ব্যথা দূর করতে এবং ত্বক ও যে কোন প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা দিয়ে চা বানিয়ে আপনি মধু দিয়ে খেতে পারেন এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী একটি খাদ্য। এছাড়া তুলসী পাতা খুব ভালোভাবে ধুয়ে তুলসী পাতা থেকে রস বের করে মধু দিয়ে সকাল বেলা খালি পেটে খেলে বুকের ভেতরের জমে থাকা কফ খুব সহজে দূর হয়। 

মধু ও তুলসী পাতা একসাথে খেলে আমাদের এলার্জিজনিত সমস্যা দূর হয়। মধু ও তুলসী পাতা একসাথে এন্টি সেপটিক হিসেবে কাজ করে। মধু ও তুলসী পাতা আমরা যদি একসাথে খাই তাহলে কিডনিতে পাথর খুব সহজে দূর হয়ে যায় এবং কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া মধু ও তুলসী পাতা একসাথে খেলে কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

তুলসী পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জেনে তারপর তুলসী পাতার রস খাওয়া উচিত। কারণ আপনি যদি সঠিক নিয়মে তুলসী পাতার রস না খান তাহলে তুলসী পাতা থেকে কখনোই সঠিকভাবে উপকার পাবেন না। 

তুলসী পাতার রস করার জন্য দুই থেকে তিনটি তুলসী পাতা নিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর তুলসী পাতা থেকে রস বের করে মধু কিংবা হালকা পরিমাণে গোলমরিচ দিয়ে খেতে পারেন। রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে সেই পানি খেতে পারেন। সকালে এবং বিকেলে চায়ের সাথে তুলসী পাতা দিয়ে খেতে পারেন। 

তুলসী পাতার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে একবার পান করতে পারেন। অনেকেই তুলসী পাতার রসের তিক্ত স্বাদের কারণে খেতে চায় না। সেজন্য আপনি তুলসী পাতার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। আর সবচাইতে সহজে যে পদ্ধতি তা হল তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন।

সচার আচার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী ও উত্তর

১. তুলসী পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয় ?
তুলসী পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও আন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। আরে উপাদান দুটি মুখের কালচে দাগ, ব্রনের দাগ, মেছতার দাগ ইত্যাদি দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া তুলসির পাতা ও নিমপাতা বেটে একসাথে মুখে দিলে এর উপকারিতা আরো বেড়ে যায়।

২. প্রতিদিন কয়টি তুলসী পাতা খাওয়া যাবে ?
আপনি দিনে ৫/৭টি তুলসির পাতা খেতে পারেন। তবে শারীরিক যদি কোন প্রবলেম থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তুলসী পাতা খান।

৩. তুলসী পাতা কি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর ?
না, তুলসী পাতা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর না তবে আপনি যদি কাঁচা তুলসী পাতা চিবিয়ে খান এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে এটি দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দেয়। তাই তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার পরিবর্তে আপনি তুলসী পাতা রস করে খেতে পারেন।

৪. কাদের তুলসির খাওয়া উচিত নয় ?
আপনি যদি ডায়াবেটিসে রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তুলসী পাতা পরিমাণে কম খাওয়া উচিত কারণ ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং তুলসী পাতা একসাথে খেলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যেতে পারে। এছাড়া আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবশ্যই ভালোভাবেই প্রতিটি মায়ের জানা উচিত। শিশুদের জন্য তুলসী পাতা কতটা উপকারী এবং তুলসী পাতার কিভাবে খেলে শিশুরা সঠিক উপকার পাবে সে সম্পর্কে অবশ্যই একজন মায়ের জানতে হবে। তুলসী পাতা ছোট এবং বড় সকলের জন্যই বিশেষ উপকারী একটি খাদ্য। 

বড়রা খুব সহজে তুলসী পাতা বিভিন্নভাবে খেতে পারে কিন্তু ছোটরা তুলসী পাতা খাওয়ার সময় অনেক ঝামেলা করে। তাই কিভাবে খাওয়ালে তুলসী পাতা থেকে সঠিক উপকার পাবে এবং কিভাবে খাওয়ালে খুব তাড়াতাড়ি বাচ্চারা তুলসী পাতা খেতে পারবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তুলসী পাতার ভূমিকা অনেক। 

শিশুদের ঠান্ডার সমস্যা, কাশি, পেট ব্যথা, বদহজম, বমি ভাব এমনকি বুকের কফ দূর করতেও তুলসী পাতার কোন জুড়ি নেই। তুলসী পাতা ভালো করে পিষে রস বের করে মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এতে তুলসী পাতার তিক্ত সাদা থাকবে না এবং খুব সহজেই বাচ্চা খেতে চাইবে। গুড়ের সাথে ১/২টি তুলসী পাতা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারে। 

এছাড়া তুলসী পাতার, আদা কুচি এবং দারচিনি একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে গরম পানিতে রস বের করে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এটি পানীয় হিসেবে খুব সহজেই খেয়ে নেবে। একেবারে অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা না দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।

লেখকের শেষ কথা - তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমি আশা করি এতক্ষণে আপনি জেনে গেছেন। তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য যেমন বিশেষ উপকারী তেমন অনেক যুগ আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতা বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 
তুলসী পাতা আমাদের শরীর ভালো রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ঠিক একইভাবে প্রতিদিন তুলসী পাতা খেলে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও ত্বকের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাই অবশ্যই প্রতিদিন নিয়ম করে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। 

এতে আপনার শরীরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থগুলো খুব সহজেই বাইরে বের হয়ে আসবে। তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আর আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url